নীলষষ্টির পৌরাণিক ব্যাখ্যা

120

নীলষষ্টির পৌরাণিক ব্যাখ্যা

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

তিথি অনুসারে আজ নীল ষষ্ঠী বাঙালিরা সারা বছর যতগুলি ব্রত পালন করে তারমধ্যে অন্যতম হল নীল ষষ্ঠীর ব্রত।দুরকম ভাবে এই দিনটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করা যায় একটি লৌকিক মতে দ্বিতীয়টি পৌরাণিক মতে।আজ নীল ষষ্ঠীর এই দুটি দিক নিয়ে লিখবো।

 

পুরান মতে দেবাদিদেব শিবের অপর নাম নীলকণ্ঠ বা নীল কারন সমুদ্র মন্থণের সময় উঠে আসা বিষ পান করে তার কণ্ঠ নীল বর্ণের হয়ে যায়।আবার বহু বৈষ্ণব মনে করেন আসলে শিব পরম বৈষ্ণব এবং স্বয়ং শ্রী কৃষ্ণ শিবের কণ্ঠে বিরাজ করছেন তাই তিনি নীল কণ্ঠ। শিবের এই রূপেরই পুজো হয় নীল ষষ্ঠীতে।

 

শাস্ত্র মতে এই তিথিতে শিবের সঙ্গে নীলচণ্ডিকা বা নীলাবতী পরমেশ্বরীর অনুষ্ঠিত হয়।দক্ষযজ্ঞে দেহত্যাগের পর সতী পুনরায় নীলধ্বজ রাজার গৃহে আবির্ভূতা হয়ে ছিলেন এবং রাজা তাঁকে নিজের মেয়ের মতো করে বড় করে শিবের সঙ্গে ফের বিয়ে দেন ৷ সেই বিবাহের তিথি উদযাপন করা হয় নীল পূজায়।এদিক দিয়ে নীলাবতীর

স্বামী রূপে শিব আজ পূজিত হন।

 

পৌরাণিক ব্যাখ্যার বাইরে যে লৌকিক ব্যাখ্যা আছে নীল ষষ্ঠী নিয়ে সেখানে একটি

ব্রত কথার উল্লেখ পাওয়ার যায়।সেই ব্রত কথা অনেকটা এই রকম – এক গ্রামে এক ব্রাহ্মণ ও ব্রাহ্মণী ছিলেন।তাঁরা ছিলেন অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ। মন দিয়ে ঈশ্বরের আরাধনা করলেও তাঁদের সব ছেলে-মেয়েগুলি একে একে মারা যায়। এই ঘটনায় ঈশ্বরের উপর থেকে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন ব্রাহ্মণী। তাঁরা দু-জনে ঘরবাড়ি ছেড়ে মনের দুঃখে কাশীবাসী হন। কাশীতে গিয়ে একদিন গঙ্গায় স্নান সেরে মণিকর্ণিকা ঘাটে বসে আছেন, হঠাত্‍ই এক বৃদ্ধা ব্রাহ্মণীকে তাদের দেখা দিয়ে একটি উপদেশ দেন। তিনি বলেন – চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন নির্জলা উপবাস রেখে মহাদেবের পুজো করবে। সন্ধেবেলা শিবের সামনে বাতি দিয়ে তবেই জল খাবে।’ ষষ্ঠীবুড়ির কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে ফের সন্তান লাভ করেন ওই নিঃসন্তান ব্রাহ্মণ দম্পতি। ব্রত কথা অনুসারে আসলে ওই বৃদ্ধা ছিলেন মা ষষ্ঠী। এবং সেই থেকে মর্তে নীল ষষ্ঠীর ব্রত প্রচলিত হয়।

 

নীল ষষ্ঠীর ব্রত যারা করেন তারা সারাদিন নির্জলা উপোস রেখে সন্ধের পর শিবলিঙ্গে জল ঢেলে, মহাদেবের পুজো করেন এবং প্রসাদ খেয়ে তবে উপবাস ভঙ্গ করেন। সাধারণত গ্রাম বাংলায় আমাদের মায়েরা এই ব্রত করেন সংসারের এবং বিশেষ করে সন্তানের কল্যাণের জন্য।

 

সবাইকে জানাই নীল ষষ্ঠীর শুভেচ্ছা।

ফিরে আসবো পরের পর্বে।

থাকবে পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে আরো একটি বিশেষ তথ্য সমৃদ্ধ লেখা।

পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।