বাংলার শিব – তিলভান্ডেশ্বর শিবের পুজো
পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক
আজ বাংলার শিব পর্বে আপনাদের মালদা জেলার এই ঐতিহাসিক এবং অদ্ভুত শিব মন্দিরের ইতিহাস জানাবো।এই শিব মন্দিরকে কেউ বলেন তিল ভান্ডেশ্বর আবার কেউ বলেন ভীমডাঙ্গি।আবার অনেকের কাছে এই প্রাচীন
শিবমন্দির হরিহর শিবমন্দির নামে বেশি পরিচিত।
মালদা জেলার বামনগোলার কাছে এই শিব মন্দির অবস্থিত। পাল যুগের রাজা মদন পাল এখানে রাজধানী স্থাপন করেছিলেন। সেই থেকে জায়গাটির নাম মদনাবতী।
পাল বংশের শাসনকালে বাংলার বিরাট অংশে যে কৈবর্ত বিদ্রোহ দেখা দিয়ে ছিলো সেই বিদ্রোহের নেতৃত্বে ছিলেন কৈবর্ত রাজ ভীম।তার নেতৃত্বে অসংখ্য ভূমিহীন এবং স্বাধীনতা হীন কৈবর্ত সম্প্রদায়ের প্রজা হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন এবং পাল বংশের শাসক দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন। সেই ইতিহাস জড়িত আছে এই তিল ভান্ডেশ্বর শিব মন্দিরের সাথে।ইতিহাস বলছে কৈবর্তরাজ ভীম এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাই এই স্থানকে ভিমডাঙ্গিও বলা হয়।
শোনা যায় যুদ্ধে ভীমকে পালবংশের রাজা রামপাল পরাস্ত করেছিলেন। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ভীমকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল হাতির পিঠে চাপিয়ে। পরবর্তীতে মোটা কাঠের গুঁড়ি দিয়ে ভীমকে পিষে মারা হয়েছিল। এই ভীমডাঙ্গিতে পরাজিত এবং নিহত ভীমকে শোয়ানো হয়েছিল বলে মনে করা হয় এবং সেই ঐতিহাসিক ঘটনার স্মরণে আজও এখানে মাটিতে শায়িত ভীমের মূর্তি গড়া হয় এবং তার পুজো করা হয়।
মন্দিরটিকে প্রায় পাঁচশো বছরের পুরোনো এক বটবৃক্ষ চারপাশ থেকে ধরে রেখেছে বা ঘিরে রেখেছে।শিব ভক্তদের মতে এখানে শিবলিঙ্গ দিনকে দিন আকৃতিতে বাড়ছে। দেবাদিদেব এখানে অত্যন্ত জাগ্রত এবং ভীষণ ভাবে তার ভক্তদের জন্যে জীবন্ত।এই মন্দিরের গর্ভগৃহ বেশ প্রশস্ত। একসঙ্গে অনেকে বসে পুজো দিতে পারেন। শ্রাবণ মাসে এবং চৈত্র মাসে এই মন্দিরে অসংখ্য দর্শণার্থীদের ভিড় হয়।
সামনেই চৈত্র সংক্রান্তি এবং নীল ষষ্ঠী। এই ধারাবাহিক শিব সংক্রান্ত আলোচনা তাই চলতে থাকবে।আবার ফিরে আসবো আগামী পর্বে বাংলার শিব নিয়ে যথা সময়ে । পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।