বাংলার শিব – তারকেশ্বর শিবমন্দিরের ইতিহাস
পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক
বাংলার শৈব্য তীর্থ ক্ষেত্র গুলির মধ্যে
অন্যতম হুগলীতে অবস্থিত তারকেশ্বর শিব মন্দির দেশ বিদেশের শিব ভক্ত দের কাছে অন্যতম জনপ্রিয় তীর্থ ক্ষেত্র এই স্থান। আজকের বাংলার শিব পর্বে এই শিবমন্দিরের কথা লিখবো।
ঐতিহাসিক তথ্য অনুসারে ষোড়শ শতাব্দীর শেষ দিকে এই অঞ্চলে বিষ্ণুদাস নামে এক স্থানীয় ক্ষত্রিয় রাজা রাজত্ব করতেন।রাজার ভাই ভারমল্ল রোজ বনে যেতেন ফলমূল ও মধু সংগ্রহ করতে।
তিনি ছিলেন যোগী পুরুষ এবং একজন একনিষ্ট শিব ভক্ত। তিনি প্রায়ই তিনি লক্ষ করতেন একটি বড় কালো রঙের শিলাখণ্ডের ওপর গাভীরা এসে নিয়মিত দুধ দিয়ে য়ায়। এই অদ্ভুত ঘটনা তিনি তাঁর দাদাকে বলেন। বিষ্ণুদাস নিজেও ছিলেন
শিবের উপাষক বনে এসে এই দৃশ্য দেখে শিহরিত হন। তৎক্ষণাৎ রাজা ভারামল্ল তখন ঐ শিলাস্তম্ভকে শিব লিঙ্গরূপে রাজ প্রাসাদের কাছে শিব মন্দির বানিয়ে প্রতিষ্ঠা করতে উদ্যোগী হলেন। বহু মাটি খুঁড়েও সেই পাথরের উৎস খুঁজে পাওয়া গেল না।
তারপর রাজা যখন বাধ্য হয়ে হাল ছেড়ে দিলেন তখন এক রাতে রাজার ভাই ভারামল্ল স্বপ্ন দেখলেন, স্বয়ং শিব তাঁকে জানাচ্ছেন যে, তিনি তারকেশ্বর শিব। তিনি ঐ স্থান থেকে গয়া ও কাশী পর্যন্ত ছড়িয়ে আছেন। সুতরাং তাঁকে সেই
জঙ্গল থেকে উচ্ছেদ না করে ওখানেই তাঁকে প্রতিষ্ঠা করা হোক।
তারপরে রাজার আদেশে বন কেটে পরিষ্কার সেই স্থানেই সেই প্রস্তর স্তম্ভের উপর একটি মন্দির নির্মাণ হয় এবং শিবের সেবা পুজো করবার জন্য এক জন সেবক নিয়োগ করা হয়।ধীরে ধীরে তারকেশ্বর শিবের মহিমা সারা রাজ্যে তথা দেশে চড়িয়ে পড়ে বহু শিব ভক্ত আসতে শুরু করেন শোনা যায় তারকেশ্বর শিব সবার সব মনোস্কামনা পূর্ণ করেন
তারকেশ্বর শিব মন্দিরটি বাংলা আটচালা শৈলীতে তৈরী মন্দির। মন্দিরের সামনে একটি
নাটমন্দির অবস্থিত এবং কাছেই দেবী এবং লক্ষী নারায়ণের দুটি মন্দির রয়েছে। মন্দিরের উত্তরে অবস্থিত পুকুরটির নাম দুধপুকুর। লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, এই পুকুরে স্নান করলে মনস্কামনা পূর্ণ হয় বিশেষ বিশেষ তিথিতে অসংখ্য মানুষ এই পুকুরে স্নান করেন।চৈত্র মাস এবং শ্রাবন মাসে
বহু শিব ভক্ত আসেন এই পবিত্র স্থানে।
ফিরে আসবো আরো একটি শিব মন্দিরের প্রাচীন ইতিহাস এবং অলৌকিক ঘটনা নিয়ে।
আগামী পর্বে। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।