বাংলার শিব – খড়দার ছাব্বিশ শিব মন্দিরের ইতিহাস
পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক
আজ আপনাদের নবাবী আমলে গড়ে ওঠা প্রাচীন এক শিব মন্দিরের ইতিহাস জানাবো। তবে শিব মন্দির ঠিক একটি নয় ছাব্বিশটি এবং এটাই এই শিব মন্দিরের বিশেষত্ব। কিভাবে এই ছাব্বিশ শিব মন্দির তৈরী হয় এবং কে করেন এই ঐতিহাসিক নির্মাণ সব জানতে গেলে পুরোটা দেখতে হবে।
অভিভক্ত বাংলা বিহার উড়িষ্যায় পলাশী যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে নবাব বংশের সূর্য যখন অস্তমিত তখন সেই সময়ে এক শ্রেণীর মানুষ ব্রিটিশদের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থাপন করে প্রচুর ধন সম্পদের মালিক হয়ে ওঠেন। তাদের মধ্যে অনেকেই পরে হয়ে উঠলেন এক একজন
ধনী জমিদার।
এমনই এক উঠতি জমিদার ছিলেন রামহরি বিশ্বাস যিনি ব্রিটিশ কোম্পানির হয়ে দেওয়ানী করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করেন। দানবীর ও ধর্মীয় কাজে উৎসাহী হিসাবে নাম হয় তার।
তিনি এক সময়ে খড়দায় বিরাট এক প্রাসাদ
নির্মাণ করে বাস করতে শুরু করেন। এই জমিদার ছিলেন শিব ভক্ত। তিনি খড়দায় বারোটি
আটচালা শিব মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।
পরবর্তীতে ১৮০৩ সালে জমিদার রামহরি
বিশ্বাস মারা যাওয়ার পর তাঁর দুই পুত্র প্রাণকৃষ্ণ বিশ্বাস ও জগমোহন বিশ্বাস জমিদারি দেখা শোনা করতেন তারাও ছিলেন ধার্মিক।শোনা যায় এলাকায় তীর্থযাত্রীদের তীর্থ কর দিতে হতো। জগমোহন বিশ্বাস এককালীন দু লক্ষ টাকা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ঘরে জমা দিয়ে সেই কর চিরদিনের মতো মুকুব করিয়ে দেন।
প্রাণকৃষ্ণ বিশ্বাসের তন্ত্র চর্চার অভ্যাস ছিল।পাশাপাশি শিবের উপাষক ছিলেন। তিনি পিতার তৈরি দ্বাদশ শিবমন্দিরের পরে আরও চোদ্দটি আটচালার শিব মন্দির তৈরী করেন। সেই নিয়ে খড়দহতে তাদের জমিদারিতে মোট ছাব্বিশটি মন্দির স্থাপিত হয়।একত্রে ছাব্বিশ শিব মন্দির বাংলা তথা গোটা দেশে আর আছে বলে শোনা যায়না।
জনশ্রুতি আছে প্রাণকৃষ্ণ বিশ্বাস তাদের শিব মন্দিরে শ্রীক্ষেত্র পুরীর মতো একটি ‘রত্নবেদী’ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। সেই জন্য তিনি
আশি হাজার শালগ্রাম শিলা ও কুড়ি হাজার বাণলিঙ্গ সংগ্রহ করেছিলেন। কিন্তু ১৮৩৫
সালে অকাল প্রয়াণের পর সেই প্রক্রিয়া
অসম্পূর্ন থেকে যায়।
আজও বাংলার এই ঐতিহাসিক শিব মন্দির একটি অপূর্ব পুড়াতাত্ত্বিক এবং ধর্মীয়
নিদর্শন হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে স্বমহিমায়।
ফিরে আসবো এমনই কোনো এক প্রাচীন এবং ঐতিহাসিক শিব মন্দিরের ইতিহাস নিয়ে যথা সময়ে আবার ফিরে আসবো। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।