বিশেষ পর্ব – বামাক্ষ্যাপার আবির্ভাব

239

বাংলার ১২৪৪ সনে তারাপুরের কাছে আটলা গ্রামে সর্বানন্দ চট্টোপাধ্যায় এবং রাজকুমারী দেবীর সংসারে বামা চরণ নামে এই অলৌকিক ক্ষমতা সম্পন্ন শিশুর জন্ম হয়।সেদিন ছিলো শিব চতুদর্শীর দিন। বামচরণ এর আরো এক ভাই এবং চারজন বোন ছিলেন কনিষ্ঠ ভাই ছিলেন রামচন্দ্র এবং চার বোনের নাম যথাক্রমে জয়কালী, দূর্গা, দ্রবময়ী এবং সুন্দরী।বাকিরা গৃহস্ত জীবনে সাধারণ জীবন যাপন করলেও শৈশব থেকে বামা ছিলেন ব্যতিক্রমী। অন্তরমুখী এবং আধ্যাত্মিক প্রকৃতির এই ছেলেই পরবর্তীতে তারাপীঠে গিয়ে আশ্রয় নেন। ধীরে ধীরে মহান সাধক কৈলাশপতির সান্নিধ্যে এবং মাতৃ সাধনা করে হয়ে ওঠেন জগৎ বিখ্যাত বামা ক্ষ্যাপা।

 

আজ তারা পীঠ আর বামা ক্ষ্যাপা যেনো সমার্থক।

তার অসংখ্য ভক্ত অনুরাগীরা এই শিব চতুর্দশীর সময়ে তারাপীঠে জমা হন কারন শিবচতুর্দশী তিথিতে বামাক্ষেপার আবির্ভাব তিথি পালন শুরু হয়। চারদিন ধরে চলে উৎসব। আটলা গ্রামে বসে মেলা এবং বামা ক্ষ্যাপার জন্মভিটেয় হয়চণ্ডীপাঠ।

দ্বারকা নদীর জলে স্নান করানো হয় বামা ক্ষ্যাপার মূর্তি। বিশেষ পুজো এবং হোম যজ্ঞে অংশ নেন

বহু দর্শণার্থী।

 

তন্ত্র সাধনায় যে উচ্চতায় বামা ক্ষ্যাপা পৌঁছে ছিলেন তা বহু সাধকের কাছেই স্বপ্ন। বামা যখন তারা পীঠে অবাধ বিচরণ করছেন তখন প্রায় প্রতিদিনই নানা অলৌকিক কান্ড ঘটাতেন তিনি।

কখনো বামা চরণ শ্মশানে জ্বলন্ত চিতার কাছে বসে থাকতেন, কখনো বাতাসে কথা বলতেন। তার অদ্ভুত আচরণ বা ক্ষ্যাপামির কারণে

তার নাম বামাচরণ থেকে বামাক্ষ্যাপা হয়। খেপা মানে পাগল। অর্থাৎ গ্রামবাসীরা তাকে অর্ধ পাগল মনে করত। আসলে তিনি ছিলেন অতি উচ্চ মানের সাধক এই ক্ষ্যাপামি ছিলো তার সত্ত্বার বাইরের আবরণ।

 

স্বয়ং তারা মা তাকে দেখা দিয়ে আশীর্বাদে করেছিলেন।সেটি ছিল ভাদ্রপদ মাসের শুক্লপক্ষের তৃতীয়া তিথি।ভগবতী তারার সিদ্ধির জন্য চূড়ান্ত সিদ্ধ মুহুর্ত। তখন রাতের সময় বামাখেপা জ্বলন্ত চিতার পাশে শ্মশানে বসে ছিল, যখন নীল আকাশ থেকে আলো ফুটে চারদিকে আলো ছড়িয়ে পড়ে।

এই আলোকে বামাচরণ মা তারার দর্শন পেয়েছিলেন। কোমরে বাঘের চামড়া পরা! এক হাতে অস্ত্র।এক হাতে মাথার খুলি, এক হাতে নীল পদ্ম ফুল, এক হাতে খড়গ। সেই দিন মা তারা বামার মাথায় হাত রাখাতে বামাক্ষ্যাপা সেখানে সমাহিত হয়। সমাধি অবস্থায় তিনি তিন দিন তিন রাত শ্মশানে অবস্থান করেন। তিন দিন পর জ্ঞান ফেরে এবং জ্ঞান ফেরার সাথে সাথে বামা চিৎকার করে এদিক ওদিক দৌড়াতে থাকে। গ্রামবাসীরা নিশ্চিত হয় যে বামা সম্পূর্ণ পাগল হয়ে গেছে। বামার এই অবস্থা একমাস ধরে চলে বলে শোনা যায়। তারপর ধীরে কিছুটা স্বাভাবিক অবস্থায়

ফিরে আসেন বামা ক্ষ্যাপা।

 

তার শৈশব থেকে কৈশোর এবং পরবর্তীতে জীবনের শেষ দিন অবধি নানা বিধ অলৌকিক ঘটনা ঘটেছে তারাপীঠে। আবির্ভাব তিথি উপলক্ষে প্রায় সারা সপ্তা ধরে বামা ক্ষ্যাপার মহিমা বর্ণনা করবো। থাকবে তার জীবনের নানা অধ্যায় এবং নানা অলৌকিক ঘটনা।পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।