বাংলার কালী – বুধো ডাকাতের কালী পুজো

47

আজকের পর্বে আপনাদের আরো এক ডাকাত কালীর কথা জানাবো। আজকের পর্বে বুধো ডাকাতের পুজো। এককালে হুগলীর কুখ্যাত ডাকাত বুধো মাকালীর বিশাল উঁচু এবং ভয়াল মৃন্ময়ী মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে বহু ধূমধাম করে তার পুজো শুরু করে সিদ্ধেশ্বরী রূপে। সেই পুজোই বুধো ডাকাতের পুজো নামে বিখ্যাত।

 

সে বহুকাল আগের কথা। হুগলীর ত্রিবেণীর জঙ্গলেই ছিল বিখ্যাত রঘু ডাকাতের ভাই জলদস্যু বুধোর ডেরা। ডেরার আশেপাশেই ছিল এক কালীমায়ের বিগ্রহ। এই মূর্তি রঘু ডাকাতের কালী নামেই প্রসিদ্ধ ছিল।রঘুর পরে দল ও পুজোর দায়িত্ব নেয় বুধো।

 

প্রতিবার মা কালীর পুজো করে তার আশীর্বাদ নিয়েই বুধোর দল বেরত ডাকাতি করতে। প্রায় সব ডাকাতিতে বুধোর দল সাফল্য পেত। ঘটনাক্রমে একবার ডাকাতি করতে গিয়ে ধরা পড়ে বুধোর দলের কয়েকজন। তবে সর্দার বুধো মা-কালীর কৃপায় পালাতে সক্ষম হয়। কিন্তু তাৎক্ষণিক ক্ষোভে বুধো ফেটে পড়ে। সে তার খাঁড়া দিয়ে দেবী অঙ্গে আঘাত হানে। পরোক্ষনে বুঝতে পারে ভারি ভুল হয়ে গাছে।তারপর স্বপ্নাদেশ পেয়ে বুধো

সেই মূর্তির ক্ষত সারিয়ে দেয়।

 

পরবর্তীকালে বুধোর ডাকাতি জীবনে আসে এক বিরাট পরিবর্তন। সে ডাকাতির প্রায় অধিকাংশ সম্পদ গরীবদের মধ্যে বিলিয়ে দেয় । বহু গরীব মেয়েদের বিয়ে পর্যন্ত দেয় নিজের টাকায়।

 

তারপর কেটে যায় বহু বছর। তখন বুধো আর নেই নেই তার ডাকাত দল। এই সময়ে একবার এই মন্দিরে ডাকাতি হয়। ডাকাতরা মায়ের সব অলঙ্কার চুরি করে নিয়ে যায়। যাবার আগে ভেঙে দিয়ে যায় প্রাচীন এই মৃণ্ময়ী কালী মূর্তিটিকেও। বর্তমানে যে মূর্তিটি আছে সেটি স্থাপন করেন জনৈক চিন্তাহরণ মহারাজ। সিমেন্টের তৈরি মূর্তিটির উচ্চতা প্রায় সাত ফুট।পরবর্তীতে

ভক্তদের সৌজন্যে মন্দিরটির সংস্কারসাধনও ঘটে।

 

আগে বিশেষ বিশেষ অমাবস্যার পুজোতে

নরবলি হতো বলে শোনা যায়। এখনও

ছাগবলির রীতি আছে।পুজো হয় তন্ত্র মতে এই মন্দিরটি এখনও বুধো ডাকাতের কালীবাড়ি হিসেবেই খ্যাত।

 

চলতে থাকবে বাংলার কালী মন্দিরগুলি নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনা। ফিরে আসবো

আগামী পর্বে যথা সময়ে। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।