একান্ন পীঠ – জয়ন্তী

31
আজকের একান্ন পীঠ পর্বে যে শক্তি পীঠটি নিয়ে আলোচনা করবো তার সঠিক অবস্থান নিয়ে কিঞ্চিৎ বিতর্ক আছে।আজকের পর্বে শক্তি পীঠ জয়ন্তী নিয়ে লিখবো ।
অনেকের মতে এই শক্তি পীঠের প্রকৃত স্থান পশ্চিমবঙ্গর হাওড়ার কোনো এক স্থানে আবার অনেকে মনে করেন ভারত ভূটান সীমান্তে এক দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে এই পীঠ অবস্থিত।তবে বাংলা দেশের শ্রীহট্টর জয়ন্তী অঞ্চলে এই শক্তি পীঠ অবস্থিত বলেই বেশি ভাগ শাস্ত্রজ্ঞ মনে করেন এবং এখানেই আছে দেবীর মন্দির।জ্ঞানার্ণব তন্ত্র ও বিশ্বসার তন্ত্রে এই স্থানের উল্লেখ আছে ।
পুরান মতে এই স্থানে সতীর ‘বামজঙ্ঘা’ পতিত হয়ে ছিলো । দেবী জয়ন্তীর ভৈরব ক্রমদীশ্বর শ্রীহট্ট জেলার অন্তর্গত জয়ন্তিয়া নামক পার্বত্য অঞ্চলে
রয়েছে দেবীর মন্দির। দুর্গম পাহারে চারকোণা অগভীর গর্তের মধ্যে একটি চৌকো পাথরের মধ্যে দেবীর অবস্থান ।
মন্দিরের অনতিদূরে আর একটি কুণ্ড আছে। স্বচ্ছ জলের এই কুন্ডের জলে দেবীর পূজো হয় । মন্দিরের থেকে অল্প দূরে আর একটি শিবলিঙ্গ দেখা যায়।পাহাড়ে তিনটি গুহা । খুব সরু এবং দুর্গম প্রবেশ পথ । তিনটি প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্টি প্রাচীন গুহা আছে । একটি হল মহাকাল ভৈরবের গুহা। একটি জয়ন্তী রূপী মহাকালী মায়ের গুহা। অপর একটি গুহাতে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ দেখা যায়।এখানে শিবলিঙ্গ ও শয়ম্ভু।
বহু কাল পূর্বে এই পাহাড়ে জয়ন্তীর রাজা দেবীর পুজো করতেন । পাহাড় কেটেই এক কালে তৈরী হয়েছিলো মন্দির যা আদতে গুহারই অংশ বলে মনে করা হয়।মন্দির তৈরীর সাথে জড়িয়ে আছে এক অলৌকিক ঘটনা।স্থানীয় আদিবাসী গ্রামের এক আদিবাসী সর্দার স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই স্থানে দেবীর পুজো শুরু করেন সেই সময়ে আদিবাসী মেয়েরা খড় বাঁশের মন্দির নির্মাণ করে দেবী আদ্যা শক্তি ও শিবের পূজা করতেন। পড়ে স্থানীয় রাজা মন্দির নির্মাণ এবং পুজোর দায়িত্ব নিজের হাতে নেন। সেই থেকে এই দেবী রাজ পরিবারের পৃষ্ঠেপোষকতায় পূজিতা হন।
শোনা যায় এক সময়ে শ্রীহট্টের এই মন্দিরে জয়ন্তীর রাজা দুর্গাপূজার নবমীর দিন নিজে দাঁড়িয়ে থেকে বলী দিতেন।পুজো হতো তন্ত্র মতে।পরবর্তীতে ব্রিটিশ আমলে রাজ তন্ত্রর অবসান ঘটলে বলী প্রথা বন্ধ হয়।
আজও এই শক্তি পীঠ অসংখ্য তন্ত্র সাধক ও মাতৃ সাধকদের আস্তানা। বিশেষ বিশেষ তিথিতে এখানে আগত ভক্তরা আজও পদে পদে অলৌকিক শক্তির উপস্থিতি অনুভব করেন
ফিরে আসবো অন্য এক শক্তি পীঠের কথা নিয়ে আগামী পর্বে যথা সময়ে। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।