দেবী লক্ষীর পৌরাণিক ব্যাখ্যা এবং একটি প্রাচীন লক্ষী মন্দিরের ইতিহাস

344

শুরুতেই আপনাদের জানাই লক্ষীপুজোর অনেক শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন। আজকের এই বিশেষ পর্বে দেবী লক্ষী সংক্রান্ত পৌরাণিক কিছু ব্যাখ্যা আমি আপনাদের সামনের তুলে ধরবো। তারপর একটি প্রাচীন লক্ষী মন্দিরের ইতিহাস এবং কিছু আপনাদের জানাবো।পরাশর-সংহিতায় যে তিনটি শক্তির পরিচয় পাওয়া যায় তার মধ্যে অন্যতম শ্রী|আবার শ্রী শব্দের অর্থ সৌন্দর্য এবং দেবীর লক্ষীর আরেকটি নাম শ্রী। অন্য একটি ব্যাখ্যা অনুসারে যার দ্বারা সকলে আশ্রিত হয় তিনিই শ্রী|আবার শ্রী অর্থে ধন ও হয়|তাই যথার্থ অর্থে দেবী লক্ষী ধন, সম্পদ, শান্তি ও সৌন্দর্যর দেবী|দেবী লক্ষীর উৎপত্তি নিয়েও পুরানে একটি বিশেষ ঘটনার উল্লেখ আছে, বিষ্ণু পুরাণ ও ভাগবত অনুসারে লক্ষ্মী দেবীর উৎপত্তি হয়েছে সমুদ্র থেকে| দুর্বাসা মুনির শাপে স্বর্গ একদা শ্রীহীন বা লক্ষ্মী ছাড়া হয়ে যায়। তখন বিষ্ণুর পরামর্শে স্বর্গের ঐশ্বর্য ফিরে পাবার জন্য দেবগণ অসুরদের সাথে নিয়ে সমুদ্র-মন্থন শুরু করেন সমুদ্র-মন্থনের ফলে উঠে আসলেন দেবী লক্ষ্মী এবং আবির্ভাবের পর লক্ষ্মী দেবীর স্থান হয় বিষ্ণুর বক্ষে|লক্ষী ও বিষ্ণুর বিবাহ নিয়ে পুরানে উল্লেখ আছে যে একবার দেবী লক্ষী বিষ্ণুকে পতি রূপে পাওয়ার জন্য সমুদ্রের মধ্যে প্রবেশ করে বহুকাল কঠোর তপস্যায় নিমগ্ন হলেন এবং লক্ষ্মীর তপস্যায় তুষ্ট হয়ে একদিন বিষ্ণু নিজে লক্ষ্মীর সামনে উপস্থিত হলেন এবং তাঁর ইচ্ছায় বিশ্বরূপ দেখালেন তারপর বিষ্ণু ও লক্ষী দেবীর বিবাহ সম্পন্ন হলো|শ্রী বিষ্ণু এবং দেবী লক্ষী এই জগতের সমস্ত শক্তির উৎস এবং আধার।বাংলার কালী মন্দির বা শিব মন্দিরের সংখ্যা অসংখ্য যা নিয়ে আমি বহু অনুষ্ঠান করেছি। এই বাংলায় বীরভূমে রয়েছে এক প্রাচীন লক্ষী মন্দির যা নিয়ে খুব একটা আলোচনা হয়না।এবার সেই মন্দির নিয়ে এক অলৌকিক ঘটনার কথা আপনাদের বলি|জনশ্রুতি আছে প্রায় পাঁচশো বছর আগে বীরভূমে এই গ্রামে আসেন পূর্ববঙ্গের এক পরিব্রাজক সন্ন্যাসী কামদেব ব্রহ্মচারী। এই গ্রামের একটি নিমগাছের তলায় সাধনস্থল হিসেবে চিহ্নিত করে থাকতে শুরু করেন। কিছুদিনে পর এক গ্রামবাসী দীঘির ধারে জমিতে চাষ করছিলেন সে হটাৎ দেখতে পায়,দীঘির জলে একটি পদ্মফুল ভেসে যাচ্ছে।পদ্মফুল তুলতে নেমে পড়েন দীঘিতে ফুটে থাকা পদ্মফুল দেখতে পেলেও নাগাল পান না কিছুতেই।সেই রাতে মা লক্ষ্মীর স্বপ্নাদেশ পান ওই গ্রামবাসী, ওই দীঘির জলেই নিরাকার রূপে দেবী লক্ষী অবস্থান করছেন। পর দিনই দীঘিতে নিম কাঠ ভাসতে দেখেন তুমি । সেই কাঠ তুলে এনে দেবীর নির্দেশ মতো গ্রামের নিম গাছতলায় আসন পাতা কামদেব ব্রহ্মচারীর কাছে নিয়ে যান এবং সাধক ওই নিম কাঠ থেকে লক্ষ্মীমূর্তি গড়ে তোলেন। সেই দেবীমূর্তি প্রতিষ্ঠা হয় গ্রামেই।আজও ওই মূর্তি পূজিত হয় এখানে|ফিরে আসবো পরের পর্বে। থাকবে দেবী লক্ষীর পুজো প্রসঙ্গে শাস্ত্রীয় আলোচনা। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।