পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক
বাংলার বিশেষ করে কলকাতার বনেদি বাড়ির পুজো গুলির মধ্যে উত্তর কলকাতার নীলমণি মিত্র স্ট্রিটের মিত্রবাড়ির পুজো ঘিরে রয়েছে
সাধক রামপ্রসাদ এবং মা সারদার স্মৃতি। আছে অনেক গল্প এবং ইতিহাস। সেসব নিয়েই আজকের পর্ব।
তখনো কলকাতা মানে সুতানুটি এবং এবং গোবিন্দ পুর সংলগ্ন গঙ্গা পার্শবর্তী এক আগাছায় ঢাকা গন্ড গ্রাম সেই সময়ে আড়িয়াদহ থেকে ভাগ্যান্বেষণে এখানে আসেন এই পরিবারের আদি পুরুষ জগন্নাথপ্রসাদ মিত্র। নানা রকম ব্যবসা করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করেন তিনি। তার পরবর্তী বংশধররা রত্নের ব্যবসায় নামেন। এমনকি এই বংশের লোকেরাই পলাশীর যুদ্ধের আগে সিরাজউদ্দৌলার ‘কোর্ট জুয়েলার’ ছিলেন অর্থাৎ রত্ন সরবরাহকারী।
ইতিহাস বলছে এই বাড়ির কাছারী বাড়িতে কাজ করতে আসেন সাধক-কবি রামপ্রসাদ সেন। হিসেবের খাতায় তাঁর লেখা গান পড়ে খুশি হয়ে হয়ে তৎকালীন জমিদার দুর্গাচরণ রামপ্রসাদকে আজীবন মাসোহারার ব্যবস্থা করে দেন এবং গ্রামে ফিরে সাহিত্য এবং সঙ্গীত চর্চার পরামর্শ দেন।
তার অনুপ্রেরণাতেই সাধক রামপ্রসাদ হয়ে ওঠেন বিশ্ববন্দিত সাধক ও বহু কাল জয়ী শ্যামা সংগীতের স্রষ্টা।
সেকালে ধনী জমিদার বাড়িতে ধুমধান করে দুর্গাপুজো অনুষ্ঠিত হবে এটাই ছিলো রীতি।
সেই রীতি মেনে জমিদার রাধাকৃষ্ণ মিত্র ১৮০৬ সাল নাগাদ মিত্রবাড়ির দুর্গোৎসবের সূচনা করেন।শুধু দূর্গাপুজো নয় দূর্গাপুজো এবং কালী পুজো দুই এখানে বেশ জাঁকজমক সহকারে পালিত হতো।
সেকালে মিত্র বাড়ির পুজোতে নামজাদা সাহেবদের ও আমন্ত্রণ জানানো হতো।
একবার এসেছিলেন লর্ড কর্নওয়ালিস স্বয়ং।ইতিহাস বলছে একবার মা সারদা এই বাড়ির পুজোর জন্য পরমান্ন রেঁধেছিলেন। আজও তাই প্রতি বছর সারদা মঠের সন্ন্যাসিনীরা এই পুজোয় আসেন।
এখানে তিনচালার প্রতিমায় পুজো হয়।
দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতীর দেবীমুখ এবং কার্তিক ও অসুরের মুখ বাংলা ধাঁচের হয় অর্থাৎ স্বাভাবিক মানুষের অবয়ব।সিংহের মুখ হয় ঘোড়ার মতো।
পদ্ম নয়, ১০৮টি নীল অপরাজিতা ফুলে সন্ধিপুজো হয়। এখানে চাল ও ফলের সঙ্গে মিছড়ি-মাখনের নৈবেদ্য দেওয়া হয়।অন্ন ভোগের পরিবর্তে বর্তমানে কাঁচা অনাজের ভোগ দেয়া হয়।
বর্তমানে এখানে পুজো পরিচালনা করেন বাড়ির মহিলারা।
সেই রাজকীয় জাঁকজমক আগের মতো না থাকলেও এই পুজো বাংলার ঐতিহাসিক বনেদি বাড়ির পুজো গুলির মধ্যে অন্যতম। মিত্র বাড়ির পুজো এতটাই জনপ্রিয় ছিলো যে বহু মনীষী এবং বিখ্যাত মানুষের আনাগোনা লেগেই থাকতো পূজোর সময়ে। এসেছেন মহা নায়ক উত্তম কুমার।
যদিও পুজো মহিলারা সামলান তবে বিসর্জনের ভার থাকে বাড়ির পুরুষদের কাঁধে।
এমন অনেক বনেদি বাড়ির পূজোর কথা এখনো বাকি আছে। চলতে থাকবে এই ধারাবাহিক পর্ব গুলি। অনেক ইতিহাস অনেক কিংবদন্তী থাকবে আগামী দিনে।পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।