দূর্গা কথা – কৃষ্ণনগর রাজ বাড়ির পুজো

95

আজকের পর্বে আলোচনা করবো ঐতিহাসিক কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির ঐতিহ্য মন্ডিত দূর্গা পুজো নিয়ে। জানবো এই পূজোর সোনালী ইতিহাস এবং বর্তমানে এখানে দুর্গাপূজা কিরকম সেই সব তথ্য ।

বহু ইতিহাসবিদের মতে নদিয়ার কৃষ্ণনগরের মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের আমলেই বাংলায় দুর্গাপুজো জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে ছিলো৷
বাংলার দূর্গা পুজো যে কয়জন রাজার হাত ধরে প্রধান উৎসবে পরিণত হয় তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন মহারাজা কৃষ্ণ চন্দ্র। স্বাভাবিক ভাবেই তার পুজোর জাঁকজমক যে ব্যাপক হবে সেটাই স্বাভাবিক।তবে অষ্টাদশ শতকের সেই রাজকীয় দূর্গা পূজোর অনেক অনেক কিছুই কালের নিয়মে আজ হারিয়ে গিয়েছে যদিও নিষ্ঠা এবং ঐতিহ্য আজও বজায় আছে।

নবাবী আমলে বিশেষত পলাশী যুদ্ধের পরবর্তী সময়ে এই রাজবাড়ির পুজোর জৌলুস
ছিল আলাদা৷ এদের হাতিশালে হাতি, ঘোড়াশালে ঘোড়া৷বড়ো বড়ো জমিদার এবং ব্রিটিশ সরকারের গণ্য মান্য ব্যাক্তিদের তখন কৃষ্ণনগর রাজবাড়িতে নিত্য আনাগোনা।ধুম ধাম করে দূর্গা পুজো করতেন স্বয়ং মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র।

বাংলায় কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির মতো বিশালাকার পুজো মণ্ডপ খুব একটা দেখা যায় না। পুজো রাজ বাড়ির পুজো মণ্ডপের বিচিত্র এবং অপূর্ব
সুন্দর কারুকার্য আজও চোখ ধাঁধিয়ে দেয়।

দূর্গা পুজোতে যাত্রামঙ্গল প্রথার প্রচলন ছিলো এই বাড়িতে দশমীর দিন পুজো শেষে ঠাকুরদালান থেকে শুভদৃষ্টি সেরে রাজপ্রাসাদে ঢুকতেন মহারাজা ও রাজ বাড়ির অন্যান্য পুরুষ সদস্যবৃন্দ। শুভদৃষ্টির তালিকায় থাকতো মোষ, ঘোড়া, হাতি, জ্যান্ত মাছ, অগ্নি, গণিকা, ঘি, দই, ধান, স্বর্ণ মুদ্রা সহ বহু মূল্য রত্ন এবং আরো অনেক কিছু।
আরও কত কী৷এই মঙ্গল যাত্রার নামক উপাচারটি পালন করা হতো এই বিশ্বাস থেকে যে এই সব মহা মূল্যবান বস্তু দর্শন রাজ্যের জন্য মঙ্গলবার্তা বয়ে আনবে৷

সেসব এখন অতীত তবে এই বেশকয়েকশো
বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও কৃষ্ণ নগর রাজ বাড়ির পূজোর ঐতিহ্য এবং বেশি ভাগ রীতিনীতি অপরিবর্তিতই রয়ে গেছে।

এখনো রথের দিন প্রতিমা নির্মাণ শুরু হয় এবং মহালয়া থেকেই শুরু হয়ে যায় পুজো৷ সেদিন ভোরে জ্বালানো হয় হোমকুণ্ড যা নিরবচ্ছিন্ন ভাবে নবমী পর্যন্ত জ্বলতে থাকে।অতীতে সন্ধি পুজোর আগে কামানের তোপধ্বনিতে পুজোর নির্ঘণ্ট জানিয়ে দেওয়া হতো৷ বেজে উঠতো ১০৮টি ঢাক। এখন সেসব না হলেও ১০৮টি প্রদীপ জ্বলে এবং এখানে ১০৮টি পদ্মফুলে দেবীর পুজো হয়।

ফিরে আসবো আগামী পর্বে অন্য কোনো ঐতিহ্য সম্পন্ন এবং ঐতিহাসিক বনেদি বাড়ির
দূর্গা পুজোর কথা নিয়ে। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।