দূর্গা কথা – ভুপালপুর রাজবাড়ির দূর্গা পুজো

70

একসময়ে গোটা উত্তর বঙ্গে যে কয়েকটি জমিদার বাড়ির ব্যাপক প্রভাব ছিলো তাদের মধ্যে অন্যতম অবিভক্ত দিনাজপুর জেলার ভুপাল রাজ বাড়ির পুজো।বর্তমানে ভুপালপুর রাজবাড়ি উত্তর দিনাজপুর জেলার অন্তর্গত।এই জমিদার বাড়ির দুর্গাপূজা নানা দিক দিয়ে বেশ তাৎপর্য পূর্ণ। আজকে জানাবো এই পূজোর ইতিহাস এবং রীতি নীতি।

চৌত্রিশ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে ষাট বিঘার বেশি জমির উপরে আজ থেকে কয়েকশো বছর আগে তৈরী হয় ভূপালপুরের জমিদারবাড়ি।তখন ব্রিটিশ যুগ। এই বাড়ির সাথে প্রথমে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এবং পরবর্তীতে ব্রিটিশ প্রশাসনের সাথে ছিলো নিবিড় সম্পর্ক।এমনকি ব্রিটিশ সরকার এই বাড়ির একতলাটি নির্মাণ করে দিয়েছিল বলেও শোনা যায়।

আর পাঁচটা জমিদার বাড়ির ন্যায় নিজেদের প্রভাব প্রতিপত্তি ও ক্ষমতা প্রকাশ করতে নানা উৎসব লেগেই থাকতো। তার মধ্যে অন্যতম ছিলো এই দুর্গোৎসব। শোনা যায় কোচবিহার, জলপাইগুড়ি এবং মালদা সহ উত্তর বঙ্গের একাধিক জমিদার বাড়ির পূজোর মধ্যে প্রতিযোগিতা লেগেই থাকতো। সেই প্রতিযোগিতায় অন্য পুজোগুলিকে প্রায়সই টেক্কা দিতো এই ভুপাল রাজবাড়ির পুজো।

বংশের আদি পুরুষ কৃষ্ণচন্দ্রের পুত্র ভুপাল চন্দ্র যখন জমিদার হন তখন তিনি বয়সে নাবালক তৎকালীন আইন অনুযায়ী নাবালক ভূপালচন্দ্রের জমিদারি দেখাশোনার দায়িত্ব ভার থাকে ব্রিটিশ সরকারের হাতে।ব্রিটিশরা সেই সময়ে জমিদার বাড়ি পুনর্নির্মাণ করে দেন। তৈরী হয় দূর্গা মন্দির।
কৃষ্ণচন্দ্রের স্ত্রী দুর্গাময়ী চৌধুরানি সেই সময়ে দুর্গাপুজোর সূচনা করেন।

এখানে শুরুর দিন থেকেই প্রতিমা হয় একচালার। মায়ের গাত্রবর্ণ হলুদ। অসুরের রং সবুজ। থাকেন শিব তার উপরে উপরে মকরবাহিনী দেবী গঙ্গা বিরাজ করেন। এখানে রীতি মেনে আজও মহা সপ্তমীর সকালে নদীতে ঘট ভরতে যাবার সময় বাড়ির পুরুষেরা উপস্থিত থাকেন। এককালে জমিদারি ঐতিহ্যের প্রতীক হিসাবে শূন্যে ৫ রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে পুজোর সূচনা করা হতো ।

আজ সেই রাজাও নেই।রানিও নেই । নেই জমিদারির সেই স্বর্ণ যুগ।কিন্তু আজও দূর্গা পুজো রয়ে গেছে একই রকম অন্তত ভক্তি, নিষ্ঠা এবং ঐতিহ্যের পরম্পরা আজও অমলিন। দশমীতে বিরাট মেলা বসে। প্রথা অনুযায়ী মেলা শেষ হলে প্রতিমা নিরঞ্জন হয় এবং আবার যথারীতি
পরের বছরের জন্য প্রতীক্ষা শুরু হয়।

বহু ঐতিহাসিক পুজো হয় সারা বাংলায়। আবার ফিরে আসবো এমনই কোনো দূর্গা পুজোর কথা নিয়ে আগামী পর্বে।পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।