বর্ধমানের বেড়ে জমিদার বাড়ির দেড়শো
বছরের পুরানো দুর্গাপুজো পুজোকে নিয়ে আছে অসংখ্য লোককথা এবং ঐতিহাসিক ঘটনা। আজকের পর্বে শতাব্দী প্রাচীন এবং ঐতিহ্যপূর্ণ এই পুজো নিয়ে লিখবো।
শোনা যায় এই বংশের দাপুটে জমিদার ব্রজেন্দ্রলাল দাসকে দেবী স্বপ্নে দেখা দিয়ে
তার মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে পুজো করার কথা বলেন। আর সেই বছর থেকেই বেড়ের জমিদার পরিবারে মা দুর্গার পুজো হচ্ছে মৃন্ময়ী মূর্তিতে। স্বপ্নাদেশ পেয়ে তৈরি হয় মূর্তিও। একচালার কাঠামোয় বসে থাকা দেবীর ডান পাশে বসে থাকেন দেবাদিদেব মহাদেব। শিব-পার্বতীর দুপাশে অধিষ্ঠাত্রী লক্ষ্মী আর সরস্বতী । নিচে বসে কার্তিক আর গণেশ। দেবী এখানে মহিষাসুরমর্দিনী নন, দাস পরিবারে হয় হরগৌরীর আরাধনা।স্বপ্নাদেশ পাওয়ার আগে পর্যন্ত ঘটে পুজো হতো।
পুজো শুরু হওয়ার পরেই জমিদার ব্রজেন্দ্রলাল দাসের জীবনে ঘটে এক অলৌকিক ঘটনা।
তার কোনও পুত্র সন্তান ছিল না।সবাই একরকম সন্তান লাভের আশা ছেড়েই দিয়ে ছিলেন সেই সময়ে দেবীর সেই স্বপ্নাদেশের পর মহাসমারোহে হরগৌরী মূর্তি তৈরি করে পুজোর শুরু হওয়ার পরই ব্রজেন্দ্রলাল দাস পুত্রলাভ করেন। দেবীর স্বপ্নাদেশে পাওয়া বলে একমাত্র পুত্রের নাম হয় দুর্গাচরণ দাস।
বেড়ে রাজবাড়ীর পুজোতে আসতেন বর্ধমানের মহারাজা সহ বহু গণ্য মান্য ব্যক্তি। সেই যুগে এই রাজবাড়ির পুজো ছিলো গোটা জেলার মধ্যে অন্যতম প্রসিদ্ধ পুজো।ঠাকুর দালানে নিয়ম
করে বসত যাত্রাপালা, গানের আসর। দুর্গামণ্ডপ লাগোয়া দোতলার ঘর থেকে অন্দরমহলের মহিলারা পুজো দেখতেন।
যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে অনেক কিছু পাল্টালেও আজও রীতি অনুসারে পঞ্চমীতে বোধনের সঙ্গে সঙ্গে শুরু পুজো। সন্ধি পুজোয় আগে পশু বলী হলেও বর্তমানে এখানে শুধু
মণ্ডা বলি হয় নিয়ম রক্ষায় ।
একটি অলৌকিক ঘটনার কথা না বললেই নয় শোনা যায় সেই শুরুর দিন থেকে আজও এখানে অষ্টমীর দিন সন্ধিক্ষণে দুর্গামণ্ডপের উপর একটি শঙ্খচিল উড়তে দেখা যায়। আবার দশমীর দিন যখন দেবীর বিসর্জন করা হয় পাশের একটি প্রাচীন জলাশয়ে তখনও আকাশে উড়তে দেখা যায় সেই শঙ্খচিলটি।
ফিরে আসবো বনেদি বাড়ির পূজোর পরের পর্ব নিয়ে। থাকবে এমন সব দূর্গা পূজোর ইতিহাস
এবং অলৌকিক ঘটনা। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।