আদি অঘোরী শিব এবং তন্ত্র

189

শিবের অনেক রূপ তার অনেক ব্যাখ্যা তার মধ্যে সব থেকে রহস্যময় রূপ হলো তার অঘোরী রূপ।আজকের পর্বে লিখবো এই বিশেষ সাধন মার্গ এবং তার অন্তর্নিহিত অর্থ নিয়ে।যুগ যুগ ধরে অঘোরীদের জীবনধারা এবং আধ্যাত্মিক অনুশীলন সব সময়ই ব্যাপক কৌতূহলের বিষয় কারন তাঁদের জীবন অনেকটাই রহস্যে মোড়া। সাধারণত এঁরা শ্মশানে থাকেন, ধ্যান করেন। মৃতদেহকেই তাঁদের আধ্যাত্মিক সাধনার মূল ভিত্তি করে তোলেন। শুধু মৃতদেহ নয় সাধারন মানুষের কাছে যা তথাকথিত ঘৃণ্য এবং পরিত্যায্য তাই তাদের সাধনার উপাদান কাশীসহ দেশের অনেক জায়গায় তাঁদের মঠ রয়েছেকুম্ভ মেলা গঙ্গা সাগর মেলায় তাদের দেখা গেলেও তাঁদের আবির্ভাব এবং হঠাৎ অন্তর্ধান সব সময়ই এক রহস্যময় বিষয়।যদিও তাদের সাধন পক্রিয়া গোপন একটি বিষয় তবু এটুকু জানা যায় যে অঘোরীরা নিজেদের সম্পূর্ণরূপে শিবের মধ্যে মিশিয়ে দিতে চান। অঘোর হল শিবের পাঁচটি রূপের একটি।অঘোর পন্থায় শিবের উপাসনা করার উপচার হিসেবে অঘোরীরা শব-সাধনার পথ বেছে নেন।অন্ত্যন্ত কঠিক এই সাধন পক্রিয়ায় একজন অঘোরী মৃতদেহের উপর বসে সাধনা করেন। ‘শব থেকেই শিব প্রাপ্তি’ এই হল তাঁদের দর্শন।অঘোরীরা মূলত তিনটি ধাপে সাধনা করেন।প্রথম শব সাধনা এখনে শবকে মাধ্যম করে সাধনা করা হয়।দ্বিতীয় শিব সাধনা এখানে শিবকে আদি অঘোরী রূপে মেনে তার ধ্যান করা হয়।তৃতীয় শ্মশান সাধনা যেখানে শ্মশান ভূমিতে তান্ত্রিক পদ্ধতিতে হোম যজ্ঞাদি সম্পন্ন করা হয়।আসলে অঘোরীরা বিশ্বাস করেন প্রতিটি মানুষই অঘোরী হিসেবে জন্মগ্রহণ করে। তাঁদের দার্শনিক ব্যাখ্যা বলে, একটি ছোট অবোধ শিশু যেমন তার বর্জ্য ও খাদ্যের মধ্যে কোনও পার্থক্য করতে পারে না তেমনই করেন না অঘোরীরাও ভেদাভেদ করেননা। তাদের অহং বোধ নেই শরীরের কোনো অস্তিত্ব নেই তাই পোশাকের কোনো প্রয়োজন নেই।তাদের চোখে ভাল বা খারাপের কোনও প্রভেদ নেই আছেন শুধু পরম পিতা যার কাছে সবাই সমান।শিবের মাস শ্রাবন মাস তন্ত্র ক্রিয়ার জন্য আদর্শ। তাই যারা শাস্ত্র মতে হোম যজ্ঞর দ্বারা গ্রহের প্রতিকার চান তারা এই সময়কে কাজে লাগাতে পারেন।শ্রাবন মাসে ধারাবাহিক ভাবে চলবে এইশিব মাহাত্ম নিয়ে আলোচনা। থাকবে এমনবহু শাস্ত্রীয় বিষয়। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।