শিব এবং মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্রের রহস্য

250

মহা মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র শিবের একাধিক মন্ত্রের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।শ্রাবন মাসে কিছু শাস্ত্রীয় রীতি মেনে মহা মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র পাঠ করলে বা শাস্ত্র মতে নিয়ম মেনে জপ করলে অকাল মৃত্যুরোধ হয়ে যায় এবং রোগ যন্ত্রনা লাঘব হয় কিন্তু এই মন্ত্র কেনো এত শক্তিশালী তা জানতে হলে জানতে হবে এক পৌরাণিক ঘটনা|শিবের পরম ভক্ত ছিলেন শ্রীখণ্ড ঋষি। তিনি ছিলেন নিঃসন্তান|সন্তানলাভের উদ্দেশ্য তিনি মহাদেবের আরাধনা শুরু করেন। শ্রীখণ্ডের প্রচণ্ড তপস্যায় খুশি হয়ে মহাদেব তাকে সন্তানসুখ দান করেন |কিন্তু এই আনন্দের সঙ্গে তাঁর জীবনে শোকও আসবে বলে জানান শিব। এরপর মার্কণ্ডেয় নামে শ্রীখণ্ডের একটি পুত্রসন্তান হয়। কিন্তু তাঁর ভাগ্য গণনা করে ঋষি দেখেন যে অসাধারণ প্রতিভাধর এই সন্তানের আয়ু মাত্র বারো বছর পর্যন্ত।তারপর মার্কণ্ডেয় ধীরে ধীরে বড় হতে লাগল।তাঁর মা ছেলের মৃত্যুর সময় এগিয়ে আসছে এই ভেবে সব সময় শোকে কাতর হয়ে থাকতেন।শ্রীখণ্ড তাঁর স্ত্রীকে এই বলে স্বান্তনা দেন, যে শিব স্বয়ং মার্কণ্ডেয়কে তাঁদের কোলে দিয়েছেন, তিনিই তাঁকে রক্ষা করবেন।যখন চিরবিদায় নেয়ার সময় আসন্ন তখন মাবাবাকে পুত্র শোক থেকে বাঁচানোর জন্য মার্কণ্ডেয় একটি শিব মন্দিরে গিয়ে শিব লিঙ্গ জড়িয়ে ধরে স্বরচিত মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র পাঠ করতে লাগলেন তিনি।বারো বছর সম্পূর্ণ হওয়ার মুহর্তে যমরাজ নিজে ধৰ্মরাজ বেশে মার্কণ্ডেয়কে নিতে আসেন। যম মার্কণ্ডেয় আত্মা হরণ করতে যাওয়ার চেষ্টা করলে শিবলিঙ্গ থেকে আত্মপ্রকাশ করেন স্বয়ং মহাদেব।যমের দিকে ত্রিশুল উঁচিয়ে তিনি জিজ্ঞেস করেন যে তাঁর ধ্যানে মগ্ন ভক্তকে তিনি টেনে নিয়ে যাওয়ার সাহস কোথা থেকে পান?ধৰ্মরাজ যখন জানান যে তার আয়ু পূর্ণ হয়েছে শিব স্বয়ং তার জীবনের একটি বছর মার্কণ্ডেয়কে দান করেন সেই একটি বছর এত দীর্ঘ সময় যে বিশ্বাস করা হয় আজও স্বশরীরে মার্কেন্ডেয় ঋষি পৃথিবীতে ধ্যানমগ্ন ভাবে বিরাজ করছেন।সেই থেকে মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র যিনি জপ করেনতাঁকে অকালে মৃত্যু স্পর্শ করেনা।শাস্ত্র মতে, সপ্তাহের শুরুর দিন অর্থাৎ সোমবার এই মন্ত্র জপ করলে, মহাদেব সন্তুষ্ট হন এবং জরা ব্যাধি থাকে না। এই মন্ত্র ১০৮ বার পাঠ করতে হয়।শ্রাবনের সোমবার এই মন্ত্র পাঠের জন্য শ্রেষ্ঠ সময়।আগামী পর্বে আবার কোনো নতুন বিষয় নিয়ে আসবো আপনাদে সামনে। শ্রাবন মাসে ধারাবাহিক ভাবে চলবে এই শিব মাহাত্ম নিয়ে আলোচনা। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।