বিশেষ পর্ব – তিরুপতি বালাজি রহস্য

305

ভগবান বহুবার বহু অবতারে, ভিন্ন ভিন্ন রূপে ভক্তের উদ্ধারের জন্য পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়েছেন মনে করা হয় কলিযুগের দুঃখ ও যন্ত্রণা থেকে মানব সমাজকে মুক্ত করতে ভগবান বিষ্ণু তিরুমালায় ‘ভেক্টেশ্বর’ রূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন|আজকের পর্ব আলোচনা করবো দক্ষিণ ভারতের এই তিরুপতি বালাজি মন্দিরের কিছু অদ্ভুত এবং অলৌকিক রহস্যময় বিষয় নিয়ে।তিরুপতি মন্দিরের আরাধ্য দেবতা ভেঙ্কটেশ্বর। তাকে ভগবান বিষ্ণুর অবতার রূপেই দেখা হয়। তার আরো অনেক নাম আছে যেমন বালাজি গোবিন্দ এবং শ্রীনিবাস।তিরুমালার রাজকুমারী পদ্মাবতীর সঙ্গে শ্রীবিষ্ণুর বিবাহ স্থির হয় এবং এই বিবাহের জন্যই বিষ্ণু সম্পদের দেবতা কুবেরের কাছ থেকে বিবাহ উপলক্ষে বিপুল ঋণ গ্রহণ করেন।ঋণ করার কারণ পদ্মাবতীর বাবা এই অর্থ দাবি করেছিলেন। কুবের এই শর্তে ঋণ দান করেন যে, বিষ্ণু যতদিন পর্যন্ত এই ঋণ শোধ করতে পারছেন না, ততদিন তিনি বৈকুণ্ঠে প্রবেশ করতে পারবেন না। সেই থেকে আজ পর্যন্ত বিষ্ণু কুবেবের ঋণ পরিশোধ করতে পারেননি। ভক্তরা ভগবানকে বিপুল অর্থ ও সম্পদ প্রদান করেন, যাতে তিনি ঋণমুক্ত হন|আজও অগণিত ভক্ত ভগবানের ঋণ পরিশোধ করতে মুক্ত হস্তে দান করে চলেছেন|সেই জন্যই এই মন্দির আজ পৃথিবীর অন্যতম ধনী মন্দির।অনেকেই এই মন্দিরে চুল দান করেন।তার সাথে একটি পৌরাণিক ঘটনার যোগ আছে।একবার ভগবান ভেক্টেশ্বরের মাথায় এক নাবালক রাখাল নিজের অজান্তেই আঘাত করেছিলেন যার ফলে ভগবানের মাথার কিছু অংশের চুল ছিঁড়ে পড়ে যায়। নীলাদেবী নামে এক গন্ধর্ব রাজকুমারী এই ঘটনাটি দেখতে পান| নীলাদেবী মনে করেন, ভগবান ভেক্টেশ্বরের সৌন্দর্যে কোন ক্ষুত থাকা উচিত নয় তিনি তখন নিজের মাথার চুল কেটে জাদুশক্তির সাহায্যে ভগবান ভেক্টেশ্বরের মাথায় প্রতিস্থাপন করেন|নীলাদেবী যেহেতু নিজের সৌন্দর্যের কথা না ভেবে ভগবান ভেক্টেশ্বরের সৌন্দর্যের বিষয়ে ভেবে নিজের মাথার চুল তাঁকে দান করেছিলেন, তাই ভগবান ভেক্টেশ্বরও রাজকুমারী নীলাদেবীকে এক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন|সেই প্রতিশ্রুতি অনুসারে এই ভেক্টেশ্বর মন্দিরে আগত প্রত্যেক ভক্ত তাঁদের নিজের মাথার চুল অর্পণ করবেন ভগবান ভেক্টেশ্বরকে। এবং সেই চুল প্রকৃত অর্থে পাবেন রাজকুমারী নীলাদেবী।সেই প্রথা আজও চলে আসছে|তিরুপতির বালাজি মূর্তির বুকে কান পাতলে শোনা যায় সমুদ্রের শব্দ|ভগবানের কপালে জমে বিন্দু বিন্দু ঘাম|ভগবানের চুল ও কোনো সাধারণ চুল নয়,তা আসল, অকৃত্তিম|বালাজির পূজা সামগ্রীও আসে একটি মাত্র নিদ্দিষ্ট গ্রাম থেকে|এই প্রথা চলে আসছে যুগ যুগ ধরে|ভগবান ভেঙ্কটেশ্বরের চোখ কেনো ঢাকা তারও নানা রকম ব্যাখ্যা হয়|অনেকে বিশ্বাস করেন এই বিপুল ঋণের কারণেই লজ্জিত বালাজি নাকি চোখের অর্ধাংশ ঢেকে রাখেন|তবে স্থানীয়রা মনে করেন বালাজির তিরুপতির চোখ যাতে ঢাকা থাকে তা আসলে তিলক|আবার এরেকটি ভিন্ন ব্যাখ্যা আছে তা হলো বালাজির দৃষ্টি অতীব অলৌকিক শক্তি সম্পন্ন। এই শক্তির প্রভাব সকলের সহ্য হবে না তাই ওই বিশেষ তিলক দিয়ে তাঁর নয়নকে অর্ধনিমিলিত রাখা হয় যাতে দর্শনকারী দের ওই মহা তেজের সম্মুখীননা হতে হয়।আমি নিজেও তিরুপতি বালাজি মন্দির দর্শন করেছি এবং এই প্রতিটি রীতি নীতি এবং অদ্ভুত বিষয় গুলি যে প্রতিদিন ঘটে চলেছে তা সামনাসামনি প্রত্যক্ষ করে ধন্য হয়েছি|ভারতে এমন রহস্যর শেষ নেই আবার পরের পর্বে ফিরে আসবো নতুন কোনো আধ্যাত্মিক এবং একইসাথে রহস্যময় বিষয় নিয়ে|পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।