বিশেষ পর্ব – পদ্মনাভ মন্দির রহস্য

201

আজকের পর্বে কেরলের বিখ্যাত ও বিতর্কিত পদ্মনাভ মন্দির নিয়ে আলোচনা করবো। এই মন্দির নিয়ে রহস্যর শেষ নেই। তবে সেই রহস্য ময় জগতে প্রবেশ করার আগে এই মন্দিরের প্রাচীন ইতিহাস কিছুটা জেনে নেয়া প্রয়োজন।এই মন্দিরটির উল্লেখ রয়েছে মহাভারত থেকে শুরু করে বিষ্ণু পুরাণ, মৎস পুরাণ, স্কন্দপুরাণ, বরাহপুরাণ, পদ্মপুরাণ সহ একাধিক ধর্মগ্রন্থে। ভগবান বিষ্ণু তাঁর অনন্তশয়ান মুদ্রায় পূজিত হন এখানে।মনে করা হয় খৃষ্টীয় অষ্টম শতাব্দীতে এই মন্দির নব রূপে প্রতিষ্ঠা করেন ত্রাভাংকোর প্রসিদ্ধ রাজাদের মধ্যে অন্যতম মার্তন্ডা বর্মা শ্রীপদ্মনাভস্বামী মন্দিরের বিষ্ণু মুর্তিটি গঠন শৈলীর জন্য জগৎ প্রসিদ্ধ কারন নেপালের গন্ডকী নদীর তীর থেকে নিয়ে আসা এক হাজারের বেশি শালগ্রাম শিলা দিয়ে নির্মিত এই মূর্তি |মন্দিরের গর্ভ গৃহে একটি পবিত্র বেদীর উপর আঠেরো ফুট দৈর্ঘ্যর দেবমূর্তিটি রয়েছে যা তিনটি ভিন্ন দরজা থেকে দর্শন করা যায়|ক্রমানুসারে মস্তক এবং বক্ষ প্রথম দরজা দিয়ে, হস্তগুলি দ্বিতীয় দরজা দিয়ে এবং পদযুগল তৃতীয় দরজা দিয়ে দর্শন করা যায়|সেই প্রাচীন কালে এই সুক্ষ জ্যামিতিক হিসেবে নিকেশ কিভাবে সম্ভব হয়েছিলো তাও এক রহস্য।এই মন্দিরের প্রধান রহস্য এই মন্দিরের বিপুল ধনভান্ডার যেখানে ঠিক কি কি আছে তার সন্ধান আজও পুরোপুরি পাওয়া যায়নি।কয়েক বছর আগে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে অনুসন্ধান চালিয়ে এই মন্দিরের অভ্যন্তরে ৬টি প্রকোষ্ঠের সন্ধান পাওয়া যায়, যার প্রত্যেকটি থেকে উদ্ধার হয় বিপুল পরিমাণ সোনা। সব মিলিয়ে কয়েক লক্ষ কোটি টাকার সোনা ও অন্যান্য মূল্যবান জিনিস এখান থেকে পাওয়া যায়|তবে মূল রহস্য এই ৬টি প্রকোষ্ঠ ছাড়িয়ে ৭ নম্বরে প্রকোষ্ঠ কে কেন্দ্র করে । এই প্রকোষ্ঠটি আজ পর্যন্ত খোলা সম্ভব হয়নি যার প্রধান কারন ধর্মীয় বিশ্বাস ও কিছুটা আইনি জটিলতা| এই প্রকোষ্ঠের দরজায় দুটি সাপের চিহ্ন আঁকা রয়েছে। কিন্তু কোনও স্ক্রু, তালা বা অন্য কিছু নেই, যা দিয়ে তা খোলা যেতে পারে|একটি কিংবদন্তি অনুসারে এই প্রকোষ্ঠের দরজা ‘নাগবন্ধনম’ দ্বারা আবদ্ধ যা কেবল মাত্র একটি নিদ্দিষ্ট মন্ত্রের বিশেষ উচ্চারণেই খুলতে পারে|আজও এক রহস্য এই বন্ধ দরজা। প্রত্যক্ষদর্শী রা বলেন বন্ধ দরজায় কান পাতলে নাকি ভিতরে জলের স্রোতের শব্দ শোনা যায় এমনকি প্রকোষ্ঠের ভিতরে সাপের হিস-হিস শব্দও শোনা গিয়েছে বলে অনেকে জানান|ঠিক কি আছে এই বন্ধ দরজার ওপারে তা নিয়ে জলপনার শেষ নেই।কেউ কেউ মনে করেন ওই বন্ধ প্রকোষ্টে রয়েছে অপার ঐশ্বর্য, ধন সম্পদ আবার কেউ কেউ বিশ্বাস করেন এর মধ্যে রাখা রয়েছে সৃষ্টিরহস্যের চাবিকাঠি|যতটা সম্পত্তির আভাস পাওয়া গেছে তাতেই পৃথিবীর ইতিহাসে এখনও পর্যন্ত যত হিন্দু মন্দিরের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বিত্তশালী মন্দির পদ্মনাভস্বামীর মন্দির।ঠিক কি ভাবে এই মন্দিরে এই অতুল ঐশর্য জমা হয়েছে তা নিয়েও কয়েকটি মতবাদ আছে।অনেকে মনে করেন দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে সোনার খনি ছিল একসময়। সুমেরীয় আমলে মালাবার অঞ্চলে ছিল ব্যবসা বাণিজ্যের বেশ কয়েকটি কেন্দ্র। বাণিজ্যে উন্নতির আশায় ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন সময়ে নানা মূল্যবান সোনার নৈবেদ্য দান করত বিভিন্ন মন্দিরে।সেই ভাবে এই মন্দির এতো সম্পত্তির অধিকারী হয়েছে। আবার অনেকে মনে করেন মুসলিম যুগে নিজেদের ধন সম্পত্তি সুরক্ষিত রাখতে এই মন্দিরের মধ্যে গোপন কুঠুরিতে রাজারা তাদের সম্পদ লুকিয়ে রাখতো।সম্পদের উৎস যাই হোক এই মুহর্তে সব থেকে বেশি আলোচিত বিষয় এই গুপ্তধনের ঘরের বন্ধ দরজা।মন্দিরের পূজারী ও শাস্ত্রজ্ঞদের মতে, এই দরজা যে খুলবে প্রাণসংশয় হতে পারে তাঁর। জোর করে দরজা খোলার চেষ্টা হলে তা রাজ্য বা দেশের উপর বয়ে আনতে পারে সাংঘাতিক দুঃসময়। এমনকি একবার আইনি পথে দরজা খোলার পরিকল্পনা হয় কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই আবেদনকারীর রহস্য জনক ভাবে মৃত্যু হয়।তারপর থেকে আর ওই দরজা খোলার চেষ্টা হয়নিজগতের কিছু রহস্য হয়তো রহস্য থাকাই শ্রেয়।ফিরে আসবো এমনই কোনো রহস্য নিয়ে আগামী পর্বে। থাকবে নতুন কোনো অজানা এবং অলৌকিক বিষয়। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।