দেবী মাহাত্ম – বড় ঠাকুরানীর পুজো

104

আসন্ন অম্বুবাচি বিশেষ করে অম্বুবাচি পরবর্তী অমাবস্যা শক্তি সাধনার উপযুক্ত সময়।শুধু তাই নয় এই সময় দেবী মাহাত্ম শোনার শোনানোর জন্য শ্রেষ্ঠ সময়। আজকের পর্বে আপনাদের বাংলার এক অতি প্রাচীন এবং ঐতিহাসিক দূর্গা মন্দিরের কথা জানাবো।প্রাচীন এই দুর্গা মন্দির রয়েছে বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরে।মল্লরাজ শ্রীমন্ত জগৎমল্লদেব বিষ্ণুপুরের গভীর অরণ্যে দেবী দুর্গার স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন। সেই স্বপ্নাদেশমতোই তাঁর রাজধানী তিনি প্রাচীন প্রদ্যুম্নপুর থেকেবিষ্ণুপুরে স্থানান্তরিত করেন।এবং রাজবাড়ির কাছেই তিনি প্রতিষ্ঠা করেন মৃন্ময়ীদুর্গা মন্দির। দেবীর মূল বিগ্রহের মুখ ও অবয়ব গঙ্গার মাটি দিয়ে তৈরি তাই মৃন্ময়ী দূর্গা মন্দির নাম হয়েছে বলে মনে করা হয়।যদিও এই পুজো বড়ো ঠাকুরানীর পুজো নামে খ্যাত। তার একটি বিশেষ কারন আছে।দূর্গা পুজোয় এবং বিশেষ বিশেষ তিথিতে ঘট স্থাপন করে এখানে পটে আঁকা দুর্গার পুজো শুরু হয়। কোনও মূর্তি বিসর্জন হয় না তবে জিতাষ্টমী তিথির পরদিন ছোটনাগপুরের রাজমহল থেকে রুপোর পাত দিয়ে তৈরি মহিষাসুরমর্দিনীকে আনা হয়। সেই মূর্তিকে বলা হয় বড়ঠাকুরানি। কয়েকশো বছরের প্রাচীন রীতি অনুসারে বড় ঠাকুরানি দেবীকে কৃষ্ণবাঁধে নবপত্রিকা-সহ স্নান করিয়ে বোধনের মাধ্যমে দুর্গাপুজোর সূচনা করা হয়।দুই দেবী অর্থাৎ মৃন্ময়ী দেবী ও রাজবাড়ীর গৃহ মন্দিরের দেবী যথাক্রমে মেজঠাকুরানী এবং বড়ো ঠাকুরানী নামে খ্যাত পাশাপাশি পটে আঁকা দেবীকে ছোটো ঠাকুরানী বলা হয়।প্রতিবার মহাষষ্ঠীর দিন বিষ্ণুপুরের রাজা ও রানিকে দেবীপট বা ছোটঠাকুরানির দর্শন করানো হয়। আগে এখানে কামান দেগে সন্ধিপুজো হতো সন্ধিপুজো চব্বিশ মিনিটের মধ্যে শেষ করা হয়।এককালে কলেরার মড়কে মল্লভূম রাজ্যের ও রাজপরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্যের মৃত্যু হয়। তারপর থেকেই সন্ধি পুজোর পরে এখানে নিষ্ঠা সহকারে মহামারীর পুজো শুরু হয় এইপুজোর অংশ হিসেবে ঘটের দিকে পেছন ফিরে পুরোহিতরা কিছু বিশেষ মন্ত্র উচ্চারণ করেন এবং সব শেষে বিশেষ কিছু উপাদান দিয়ে নির্মিত ভোগ শুধু মাত্র রাজবাড়ির সদস্যদের খেতে দেয়া হয়।যুগ ধরে বাংলার কতো এমন দূর্গা মন্দির এবং প্রাচীন কালী মন্দিরে এমন অদ্ভুত কতো রীতি চলে আসছে।আগামী দিনে দেবী মাহাত্ম এবং অম্বুবাচি নিয়ে আরো অনেক কথা হবে।থাকবে মন্দির রহস্য নিয়ে নতুন পর্ব।পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।