দেবী মাহাত্ম – বর্গেশ্বরী দেবী

60

আজ দেবী মাহাত্ম পর্বে যে দেবীর কথা বলবো তার সাথে বাংলার ইতিহাসের একটি অধ্যায় জড়িত আছে।তার নাম টিও ভারী অদ্ভুত।
কি সেই ইতিহাস আর আর কেনো এমন অদ্ভুত নাম জানবো। আজকের পর্বে দেবী
বর্গেশ্বরী মহিমা এবং ইতিহাস।

বাংলায় তখন নবাবী যুগ চলছে। অবিভক্ত বাংলা বিহার উড়িষ্যার রাজধানী মুর্শিদাবাদ। মসনদে বৃদ্ধ নবাব আলিবর্দি খান। দৌহিত্র সিরাজুদ্দউল তখন কিশোর। সেই সময়ে রাতের আঁধারে একদল লোক ঘোড়া টগবগিয়ে হানা দিতে থাকল বাংলায়। তারা গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিতে থাকল, লোকজনকে মেরে-ধরে সবকিছু কেড়ে নিতে থাকল। দোকানপাট বাজার সব তাদের অত্যাচারে বন্ধ হয়ে গেল। সবাই তাদের ভয়ে ঘর থেকে বেরুনো বন্ধ করে দিল। শান্ত বাংলা যেন হঠাৎ করেই আতঙ্কের বাংলা হয়ে উঠল।

এই দুবৃ‌র্ত্তরাই কিন্তু ছিলো ছড়াগানের সেই বর্গি। এই বর্গি শব্দটা এসেছে ফারসি ‘বারগিস’ থেকে, যেটার অর্থ ‘প্রাচীন মারাঠা যোদ্ধা’। তারা ছিলো বেজায় কট্টর হিন্দু। মাতৃ শক্তির আরাধনা করতো
তারা।মুঘলরা ছিলো তাদের প্রধান শত্রু।

ইতিহাস বলছে ১৭৪০ খিস্টাব্দে মারাঠা অশ্বারোহী বর্গিরা কংসাবতী নদী অতিক্রম করার উদ্দেশ্যে পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দকুমারের বরগোদা গ্রামে অস্থায়ী সৈন্য শিবির স্থাপন করে। তাদের আগ্রহেই তখন প্রতিষ্ঠিত হয় দেবী বর্গশ্বেরী মন্দির। আর তখন থেকেই মায়ের আরাধনা শুরু হয়।যেহেতু বর্গীরা দেবীর প্রতিষ্ঠা করে ছিলো তাই নাম হয়
বর্গেশ্বরী।

সব জাতি ও সম্প্রদায় মিলেমিশে পালন করে আসছে এই দেবীর পুজো।কাছেই তমলুকে রয়েছে বর্গভীমার মন্দির। কথিত, বর্গভীমার বোন হন দেবী বর্গশ্বেরী। প্রাচীন এই পুজোকে ঘিরে সমস্ত ধর্মের মানুষ একাত্ম। একসঙ্গে আরাধনা করে পুজোর কটা দিন।

বিশেষ বিশেষ তিথিতে ধুম ধাম করে দেবী বর্গেশ্বরীর পুজোর আয়োজন করা হয়। দূর্গা পুজোর সময় এখানে পুজো উপলক্ষে বিরাট উৎসব হয় পুজোতে ভোগ হিসেবে দেওয়া হয় গুড়পিঠে। এই প্রসাদ পাওয়ার জন্য ভিড়ও হয় খুব।

সামনের ফল হারিণী অমাবস্যাও একটি বিশেষ তিথি যে তিথি শক্তি সাধনার পাশাপাশি গ্রহ দোষ খন্ডনের জন্য আদৰ্শ। ফিরে আসবো পরের পর্বে দেবী মাহাত্ম এবং মন্দির রহস্য নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনা এমনই চলতে থাকবে। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।