দেবী মাহাত্ম – দেবী আনন্দময়ী

120

তন্ত্র এবং জ্যোতিষ জগতে যতগুলি গুরুত্বপূর্ণ তিথি আছে তার মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ তিথি হলো ফল হারিণী অমাবস্যা তিথি এবং বাংলার প্রায় সব গুলি কালী মন্দিরেই এই তিথিতে বিশেষ পুজো ও হোম যজ্ঞর আয়োজন করা হয় এমনই এক কালী মন্দির রয়েছে হুগলি জেলার সোমড়া অঞ্চল।
এখানে প্রতিষ্ঠিত কালী মা আনন্দময় নামে খ্যাত দেবীর বিশেষত্ব হলো এই যে তিনি এখানে
পূজিতা হন ভৈরবী হিসেবে।

প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে মা আনন্দময়ীরা তিন বোন বাকি দুজন নিস্তারিণী এবং হরসুন্দরী পার্শবর্তী জায়গার তাদের মন্দির রয়েছে । তবে আনন্দময়ী মায়ের প্রতিষ্ঠাতা জমিদার শ্রী বীরেস্বর মিত্র মুস্তাফি। স্বপ্নাদেশ পেয়েই কষ্ঠি পাথরের এই মূর্তি গঙ্গার ধারেই সম্পূর্ণ আড়ম্বরে স্থাপন করেন তিনি। তবে আনন্দময়ীর মূর্তিতে রয়েছে বিশেষত্ব, তিনি ভৈরবী এবং পঞ্চমুণ্ডের আসনে মহাদেবের উপর অধিষ্ঠিতা। সম্পূর্ণ টেরাকোটার মন্দিরে মায়ের আদল একেবারেই জগৎজননী স্বরূপ। 
সচরাচর মহাদেবের উপর আসনে অধিষ্ঠিত দেবীর দেখা মেলে না।সেদিক দিয়েও ব্যাতিক্রমী এই মা আনন্দ ময়ীর রূপ।

শোনা যায় কাশী যাত্রার সময়
নাকি রানি রাসমণি গঙ্গাবক্ষে এই স্থান দিয়েই
যাত্রা করছিলেন। একঝলকেই এই মন্দির মনে ধরেতার তাই হয়তো এই মন্দিরের সঙ্গে অদ্ভুত ভাবে মিল রয়েছে দক্ষিণেশ্বর ভবতারিণী মন্দিরের। আদল থেকে মন্দিরের গঠন বেশ কিছুটা এক।

শুরুতেই পঞ্চরত্নের মন্দির আছে এবং দুই দিকে মহাকাল পাহারায় ঘিরে রেখেছেন মা আনন্দময়ীকে। সমগ্র পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে এমন সুনিপুণ টেরাকোটার মন্দির খুবই কম আছে বিশেষত্ব রয়েছে মন্দিরের চুড়ায় পঁচিশটি চূড়া বেষ্টিত এই মন্দির বাংলার প্রাচীন টেরাকোটা শিল্পের উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত।

এই মন্দিরের পাশের পুকুরেই আছে সোনার নোলক পড়া মাছ এবং সেই মাছ হলো সুখ এবং সমৃদ্ধির মূর্ত প্রতীক যা বহু প্রাচীন কাল থেকে ওই
পুকুরে বিরাজ করছে।

আনন্দ ময়ী মায়ের কাছে মনোবাঞ্ছা নিয়ে এলে কোনওভাবে খালি হাতে ফিরে যাবেন না কেউই। তাঁর অপার করুণা থেকে কেউ বঞ্চিত হন না
শাস্ত্র মতে প্রথা মেনে নিত্যসেবা হয় সকাল এবং সন্ধেয় আরতি হয় দীপান্বিতা প্রতিটি অমাবস্যা তিথিতে দেবী আনন্দময়ীর পুজো উপলক্ষে বহু মানুষ আসেন এখানে।

আগামী ১৮ তারিখ ফল হারিণী অমাবস্যা। শাস্ত্র মতে গ্রহ দোষ খন্ডনের জন্য আদৰ্শ তিথি এই অমাবস্যা। তাই যারা নিয়মিত দেবী মহাত্ম বা মন্দির রহস্য দেখেন তারা এই তিথির গুরুত্ব নিশ্চই জানেন।চাইলে কাজে লাগান এই তিথিকে নিজের গ্রহের প্রতিকারের জন্য।ফিরে আসবো পরের পর্বে দেবী মাহাত্ম বা মন্দির রহস্যর নতুন পর্ব নিয়ে। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।