প্রতি বছর ২৫ এ বৈশাখ এলেই কবি গুরুকে নিয়ে কিছু না কিছু বলে থাকি। শুধু তাই নয় তার গানে তার কবিতায় তাকে স্মরণ করার চেষ্টা করি নিজের মতো করে। এ অনেকটা গঙ্গা জলে গঙ্গা পুজো বলা যায়।বিগত বছর গুলিতে রবীন্দ্রনাথের রসবোধ নিয়ে লিখেছি। তার রসনা তৃপ্তি এমনকি তার পরলোক চর্চা নিয়েও আলোচনা করেছি। আজ তার পোশাক নিয়ে ভাবনা বা সাজ সজ্জা নিয়ে দুচার কথা বলি।রবীন্দ্রনাথ তার যথেষ্ট স্টাইলিশ বা ফ্যাসন সচেতন ছিলেন এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তিনি শেষের কবিতায় এক জায়গায় লিখছেন ফ্যাসন হলো মুখোশ আর স্টাইল হলো মুখ।অর্থাৎ তিনি বলতে চেয়েছেন স্টাইল বলতে আমরা যা বুঝি তা হলো ব্যাক্তিত্ব যা সহজাত এবং সতস্ফূর্ত আর ফ্যাশন হলো আসল ব্যাক্তিত্বকে আড়াল করার প্রচেষ্টা যা পরিবর্তনশীল এবং ক্ষণস্থায়ী।তবে শুধু রবীন্দ্রনাথ নন তার পূর্ব পুরুষরাও তাদের পোশাক নিয়ে আলোচনায় থাকতেন।ঠাকুর বাড়ির সাজ পোশাকের ইতিহাস নিয়ে অনেক কথাই শোনা যায়।অবনীন্দ্র নাথ ঠাকুর শোভা বাজার রাজ বাড়ির এক জলসা প্রসঙ্গে লিখে ছিলেন ” জলসার দিন দেবেন্দ্রনাথ পরলেন— ‘সাদা আচকান জোড়া…মাথার পাগড়িটি অবধি সাদা। কোথাও জরি কিংখাবের নামগন্ধ নেই…পায়ে কেবল সেই মুক্তো বসানো মখমলের জুতো জোড়াটি।’ এ সাজ দেখে রাজবাড়ির কর্তা, সভার ছোটদের দেখিয়ে বলেছিলেন—‘দেখ, একেই বলে বড়লোক। আমরা যা গলার মাথায় ঝুলিয়েছি, ইনি তা পায়ে রেখেছেন!’ঠাকুর পরিবারের মহিলারাও পিছিয়ে ছিলেন না সেকালে বেনারসি জোড়, গলায় মুক্তোর মালা, হিরের কণ্ঠা, হাতে বালা, আঙুলে জড়োয়া আংটি’ পরে বিয়ে বাড়িতে যেতেন ঠাকুর পরিবারের গৃহিনীরা যা দেখে চোখ ধাধিয়ে যেত বনেদি বাড়ির অভিজাত অতিথিদের।সেই দিক দিয়ে দেখতে গেলে রবীন্দ্রনাথ যখন বড়ো হচ্ছেন তখন ঠাকুর পরিবারের আর্থিক প্রতিপত্তি তখন ওস্তাচলে যার প্রভাব পড়েছিল সেই পোশাক আশাকের আভিজাত্যতে রবীন্দ্রনাথ নিজেই নিজের জীবন স্মৃতিতে লিখেছেন— ‘বয়স দশের কোটা পার হইবার পূর্বে কোনওদিন কোনও কারণেই মোজা পরি নাই। শীতের দিনে একটা সাদা জামার উপরে আর একটা সাদা জামাই যথেষ্ট ছিল।’ এ তথ্য জানিয়ে রবীন্দ্রনাথ কৌতুক করে বলেছেন আমাদের চটি-জুতা একজোড়া থাকিত। কিন্তু পা দুটা যেখানে থাকিত সেখানে নয়।’ তবে কৈশোরের প্রথমেই দেবেন্দ্রনাথের সঙ্গে হিমালয় যাত্রার সময়, পরিবারের উপযুক্ত সাজ তৈরি হয়েছিল তাঁর জন্য। ‘আমার বয়সে এই প্রথম আমার জন্য পোশাক তৈরি হইয়াছে। কী রঙের কী রূপ কাপড় হইবে—পিতা স্বয়ং আদেশ করিয়া দিয়াছেন। মাথার জন্য একটা জরির কাজ করা গোল মখমলের টুপি হইয়াছিল।’কৈশোরে বিলিতি শুট বা জুতো পড়লেও তাতে নানা রকম বৈচিত্র চোখে পড়তো। তার কুর্তা বা পাঞ্জাবীতেও ঠাকুর বাড়ির কিছু বৈশিষ্ট লক্ষ করা যেত।যৌবনে অবশ্য পোশাক নিয়ে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা তিনি করেছেন তা তার নানা বয়সের ছবি থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়। বিদেশ ভ্রমণ কালে নানা দেশের পোশাক ও তিনি পড়েছেন এবং দিব্যি মানিয়েছে তাকে।আর মানাবে না কেনো আসল রহস্য তো লুকিয়ে তার রূপে তার ব্যাক্তিত্বে। তার রূপ সম্পর্কে প্রমথ চৌধুরী লিখেছেন, ‘আমি এর পূর্বে রবীন্দ্রনাথের মতো সুপুরুষ কখনো দেখিনি। তাঁর বর্ণ ছিল গৌর, আকৃতি দীর্ঘ, কেশ আপৃষ্ঠ-লম্বিত ও কৃষ্ণবর্ণ, দেহ বলিষ্ঠ, চরম মসৃণ ও চিক্কণ, চোখ-নাক অতি সুন্দর।তবে পরিণত বয়সে রবীন্দ্র নাথ গরদের ধুতি পাঞ্জাবি পরে, গলায় চাদর ঝুলিয়েশান্তিনিকেতনে বাকি জীবন টা কাটিয়ে ছিলেন।তখন তিনি শান্ত সমুদ্রের নেয় ধীর স্থির তার জীবন তখন আধ্যাত্মিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ।রবীন্দ্র নাথ কে নিয়ে আলোচনা হোক বা লেখা লেখি।অল্প কথায় তাকে ধরা মুশকিল। তাই আবার কখনো সময় সুযোগ হলে চেষ্টা করবো তার জীবনের অন্য কোনো আঙ্গিক ছুঁয়ে দেখার।সবাইকে পঁচিশে বৈশাখের শুভেচ্ছা।ভালো থাকুন রবীন্দ্র নাথ কে নিয়ে থাকুন। ধন্যবাদ।