দেবী মাহাত্ম- জক পুরের মা মনসা

222

বাংলার দেবী শক্তির আরাধনা সারা দেশে প্রসিদ্ধ। সেই দেবী কখনো দুর্গা কখনো কালী কখনো জগদ্ধাত্রী আবার কখনো লৌকিক দেবী মা শীতলা বা নাগেদের দেবী মনসা। সামনেই ফল হারিণী অমাবস্যা তাই দেবী মাহাত্মা নিয়ে আলোচনায় আরো জোর দেবো সেটাই স্বাভাবিক। দেবী মাহাত্ম বর্ণনা করার এবং দেবী মহিমা শ্রবণ করার এটাই শ্রেষ্ঠ সময়। আজকের পর্বে এক রহস্য ময় এবং অলৌকিক দেবী ও তার মন্দির নিয়ে আলোচনা করবো।পশ্চিম মেদিনীপুরের একটি প্রাচীন স্থান হলো জকপুর যা এককালে ডাকাত ও তান্ত্রিকদের বাসস্থান ছিলো কারন গোটা এলাকা ছিলোজঙ্গলে ঢাকা। শোনা যায় সেই গভীর অরণ্য ভেদ করে দিনের আলো মাটিতে এসে পৌঁছাতো না।সে যুগে লোকে বলতো মনসার জঙ্গল। কারন দুর্গম সেই অঞ্চলে যাতায়াত করতে হলে পদে পদে ছিলো সর্প দংশনের ভয়।জঙ্গলের মধ্যে জরাজীর্ণ এক মনসা মন্দির নির্মাণ করে কৃষকরা মনসার আরাধনা করে আসছিলো বছরের পর বছর ধরে।এবং দেবীর উপর তাদের ছিলো অগাধ বিশ্বাস।শুধু সাপের কারণেই নয় মনসাকে তারা কৃষিদেবী রূপেও মানতো।তবে যুগ যুগ ধরে অবহেলায় থাকা সেই মনসা মন্দির এক সময় লোক চক্ষুর অন্তরালে চলে যায়।তারপর কিভাবে দেবী পুনরায় প্রচারে এলেন এবং তার মাহাত্মা লোক মুখে ছড়িয়ে পড়লো সেই নিয়ে আছে এক অলৌকিক কাহিনী।জকপুরের জমিদার যোগেশ্বর রায় একদিন ভোর রাতে মা মনসার স্বপ্নাদেশ পেলেন । তিনি স্পষ্ট দেখেন, চতুর্ভুজা মা মনসা হাত নেড়ে নেড়ে তাকে বলছেন, ঐ জঙ্গলেই মা আছেন । জমিদার যেন মায়ের পুজোর প্রচার করেন। ঘুম ভাঙতে জমিদার স্ত্রীকে ডেকে বলেন সব কথা । মূহুর্তের মধ্যে কাকভোরে জমিদার বাড়িতে যে যেখানে ছিল হাজির হয়ে যায় ।শুরু হলো জঙ্গল অভিযান উদ্দেশ্য মা মনসার প্রাচীন থানটি উদ্ধার করা।ঐ জঙ্গলের সাপের কথা সকলের জানা । সেই ভয় উপেক্ষা করে জমিদার সদলবলে ঐ স্থানে গিয়ে জঙ্গল পরিষ্কার করে মায়ের থানটি খুঁজে বের করেন একটি প্রকান্ড উই পোকার ঢিবির তলা থেকে।যদিও অসংখ্য বিষধর সাপ ছুটে আসে কিন্তু সেদিন কারুর কোনো ক্ষতি হয়নি দেবীর কৃপায়। হয়তো মা মনসাই তাদের রক্ষা করেছেন।তারপর জমিদার দেবীকে নিয়মিত পুজো করার নির্দেশ দেন।মন্দির তৈরীর ব্যবস্থা হয়।পরবর্তীতে উইঢিপিটিকে কংক্রিটে মুড়ে দেওয়া হয় পাশে একটি লাল পদ্ম বানানো হয় তৈরী হয় সুন্দর এবং সু সজ্জিত এক মনসা মন্দির। যে মন্দিরে আজও স্বমহিমায় বিরাজ করছেন মা মনসা।প্রতি শনিবার এবং মঙ্গলবার হাজার হাজার পূণ্যার্থী পূজা দিতে আসেন । এছাড়া বছরের বিশেষ বিশেষ দিনে পূণ্যাথীর ভিড়ে মন্দির প্রাঙ্গণ ক্ষুদ্র মেলার রুপ ধারন করে ।জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাই মা মনসাকে এখানে পুজো করেন।সামনেই ফল হারিনী অমাবস্যা। দেবী মহাত্মা নিয়ে চর্চা করার জন্য এই সময় অতি উত্তম। পাশাপাশি গ্রহ দশ খণ্ডন ও তন্ত্র মতে প্রতিকার নিতে চাইলেও এই সময়কে কাজে লাগাতে পারেন। ফিরে আসবো আগামী পর্বে। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।