দেবী মাহাত্ম – চিনিশ পুর কালী বাড়ি

263

বাংলার কালী মন্দির নিয়ে বলতে গেলে এমন কিছু কালী মন্দিরের কোথাও বলতে হবে যা দেশ ভাগের পর ওপার বাংলা অর্থাৎ বাংলাদেশে অবস্থান করছে। এমনই এক কালী মন্দির ওপার বাংলার চিনিশ পুর কালী মন্দির।যতীন্দ্র মোহন রায়ের ‘ঢাকার ইতিহাস’ গ্রন্থে শ্রী শ্রী চিনিশপুর কালিবাড়ীটির ইতিহাস জানা যায়।আজ এই মন্দির নিয়ে লিখবো।নরসিংদী চিনিশপুর গ্রামে অবস্থিত এই প্রাচীন মন্দির।এই স্থানের অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে প্রায় এক একর জমির উপর বেড়ে উঠা বিশালাকার বট বৃক্ষ যা আমাদের হাওড়ার বোটানিক্যাল গার্ডেনের বট গাছের কথা মনে করিয়ে দেয়।ব্রিটিশ আমলে নীলকর জেমস ওয়াইজের দেওয়ান রামকৃষ্ণ রায় বর্তমান মন্দিরটি নির্মাণ করেন।কালীবাড়ীর অদূরেই একসময়ে নীল কুঠি ছিল। বর্তমানে নীল কুঠির ভাঙ্গা ভিটা ও পরিত্যক্ত ইঁদারা কোনো রকমে টিকে আছে।চিনিশ পুর কালীবাড়ীর প্রতিষ্ঠাতা সাধক দ্বীজরাম প্রসাদ ‘চীন ক্রম’ নামের সাধন প্রণালীতে অভ্যস্ত ছিলেন। চীন ক্রম থেকেই চিনিশপুর গ্রামের নামকরণ হয় বলে ধারণা করা হয়।চিনিশ পুর কালী বাড়িতে কোন প্রতিমা নেই।দেবালয়ের মধ্যভাগে একটি চতুস্কোন বেদী এবং বেদীর উপর কালিকা যন্ত্র আঁকা আর এই যন্ত্রেই দেবী মায়ের অধিষ্ঠান।জাগ্রত এই মন্দির নিয়ে একটি অদ্ভুত কিংবদন্তী প্রচলিত আছে শুরুর দিন থেকেই।কথিত আছে এই মন্দিরে কেউ রাতে থাকতে পারে না আজ অবধি রাতে জপধ্যানে বসে কেউ জীবিত আসতে পারেনি এই মন্দির থেকে।শোনা যায় একবার শ্রী শ্রী নিগমানন্দ পরম হংস দেব তার চারজন অন্তরঙ্গ শিষ্য সহ উক্ত চিনিশপুর কালী দর্শন আসেন এবং রাতে থাকা মনস্থির করেন।তারপর গভীর রাতে মন্দিরে ঢুকেই ঠাকুর দরজার বন্ধ করে দিলেন। আসনে বসে একটু ধ্যানস্থ হতেই ঠাকুর কারও উপস্থিতি অনুভব করল। চোখ মেলে দেখেন এক কিশোরী তার বাম পা ঝুলিয়ে ও ডান পা তার বাম উরুতে রেখে বসে আছে, মুক্ত কেশী পরমাসুন্দরী লালচেলী পরা। তার রুপের জ্যোতিতে মন্দির আলোকিত।সাধক মায়ের চরণে প্রণাম জানিয়ে দিব্য অনুভূতি নিয়ে ফিরে এসেছিলেন।চিনিশপুর কালীবাড়ী নিয়ে বহু এমন সব অলৌকিক ঘটনার খোঁজ পাওয়া যায় যেমন কালীবাড়ীর পুকুরে হাত দেখিয়ে একবার দেবী তার ভক্তকে বলেছিলেন দেখ তোর শাঁখা আমি হাতে পরেছি।বহু এমন দেবী মন্দির রয়েছে সারা দেশে। আবার ফিরে আসবো আগামী পর্বে অন্য কোনো দেবী মাহাত্ম নিয়ে। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।