বাংলায় দশ ভূজা মানে সাধারণ দেবী দুর্গাকেই বোঝায় আর দেবী কালী মানে চতুর্ভুজা।কিন্তু মায়ের এই দুই রূপই বহু বছর ধরে একত্রে পুজিতা হয়ে আসছে দক্ষিণ বঙ্গের প্রত্যন্ত এক অঞ্চলে।দেবী আদ্যাশক্তি এখানে অর্ধ কালী ও অর্ধ দুর্গারূপে বিরাজ করছেন। আজকের পর্বে এই অদ্ভুত কালী মূর্তিনিয়ে আলোচনা করবো।প্রায় দুই শতাব্দী প্রাচীন পুজোটির পিছনে রয়েছে এক অলৌকিক ঘটনা। শোনাযায় ১৮৬৪ সালে পূর্ববঙ্গের ঢাকার জেলায় দারোগা ছিলেন হরিকিশোর ঘোষ একরাত্রে স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন জগজ্জননী মায়ের।মূর্তি গড়ে পুজো করতে হবে।সঙ্গে সঙ্ঙ্গে শুরু হল পুজোর তোড়জোড়। এক শুভতিথিতে সূচনা করলেন মূর্তি তৈরির কাজ। ধীরে ধীরে চিন্ময়ী দেবী রূপ পেতে লাগলেন মৃন্ময়ী প্রতিমায়। কিন্তু মূর্তি তৈরির একেবারে শেষ পর্যায় পটুয়ারা হলুদ রঙ করা মাত্রই মূর্তির ডানদিকের অংশের রঙ বদলে যায় কালো রঙে।সবাই অবাক হলো। কিন্তু তখন হরিকিশোরের মনে পড়ল তার স্বপ্নের দেবীমূর্তিও যেন ঠিক সাধারণ ছিল না বিচিত্র ছিলো তাঁর রূপ। এই সঙ্কটের মুহূর্তে কুলপুরোহিত তাকে উপদেশ দিলেন দেবীকে অর্ধকালী অর্ধদুর্গা রূপ দিতে। কারন দেবীর হয়তো তাই ইচ্ছে। দেশভাগের পর ঘোষ বংশের উত্তরপুরুষরা চলে আসেন এপার বাংলায়।শুরু হয় দশ ভূজা দুর্গা ও ঘোর কৃষ্ণ বর্ণের পুজো একই কাঠামোতে। একই মূর্তিতে।নির্দিষ্ট মাপের পাটাতনের ওপর একচালার প্রতিমা। দেবীর শরীরের ঠিক মাঝ বরাবর চুলচেরা ভাগ- ডানদিকে অমানিশারূপী দেবী কালিকা এবং বামদিকে তপ্তকাঞ্চনবর্ণা দেবী দুর্গা।দূর্গা পুজোর সময় নতুন করে সাজানো হয় পূজা মণ্ডপ এবং দেবী মূর্তিও তৈরী হয় ঠাকুর দালানে।পুজোর আচার-বিধিও কিছু ভিন্ন।মায়ের প্রতীকরূপে দর্পনকে স্নান করানোর রীতি এখানে। স্নানে লাগে ১০৮রকমের জল।নিষ্ঠা সহকারে পুজো পরিচালিত হয় তিথি মেনে তারপর দশমীর সকালে দর্পন বিসর্জন হয়। সন্ধ্যাবেলা বাড়ির সধবা মহিলারা দেবীকে বরণ করেন। এরপর বাড়ির পুরুষেরা মহা সমারহে দেবীকে বিসর্জন দেন বাড়ির পুকুরে। দেবীর এই অদ্ভুত রুপ দেখতে আসেন বহু দর্শণার্থী।দেবী মাহাত্ম নিয়ে চলতে থাকবে ধারাবাহিক ভাবে আলোচনা।ফিরে আসবো পরের পর্বে। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।