দেবী মহাত্ম- রাজবল্লবী মাতার মন্দির

270

দেবী মহাত্ম শীর্ষক এই পর্বেআপনাদের হুগলি জেলার অন্তর্গত রাজবলহাটের দেবী রাজবল্লভী মন্দিরের কথা লিখবো।দেবী রাজবল্লভী দ্বিভূজা। তাঁর ডান হাতে একটি ছুরি আর বাঁ হাতে ধরা সিঁদুরের পাত্র। কটিদেশে ছোট ছোট হাতের কোমরবন্ধ, গলায় নরমুণ্ডের মালা‌। সব মিলিয়ে দেবী কালিকার সঙ্গে রাজবল্লভীর কিছু মিল আছে তবে গায়ের রং সাদা।দেবীর পায়ের নিচে একটি নয়, বরং দুটি শিবমূর্তি দেখতে পাওয়া যায়। ডান পা রয়েছে কালভৈরবের বুকের উপরে। আর বাম পা রাখা আছে বিরূপাক্ষ শিবের মাথায়।বহু ঐতিহাসিক মনে করেন রাজবল্লভী মায়ের নামেই রাজ বল হাট নাম হয়েছে এই স্থানের।শোনা যায়, বহুকাল আগে যখন এই অঞ্চলের পাশ দিয়ে কংসাবতী নদী বয়ে যেত, তখনই এক সদাগর দেবীর দেখা পান। তিনিই এখানে মন্দির তৈরি করেন। তবে এটি নিছক জনশ্রুতি হতে পারে কারন ইতিহাস অন্য কথা বলছে।রাজবলহাট তথা দেবী রাজবল্লভীর প্রতিষ্ঠা করেন রাজা সদানন্দ রায়।স্থানীয় রাজা সদানন্দ রায় একবার দামোদর ও রণ নদীর মধ্যবর্তী জঙ্গলাকীর্ণ স্থানে মৃগয়া করতে গিয়েছিলেন। সেখানে থেকে ফিরে প্রাণীহত্যার জন্য গভীর মনস্তাপে পড়ে যান। পরবর্তীতে সেই মনোস্তাপ থেকে মুক্তি পেতে গুরুর নির্দেশে গভীর অরণ্যে মাতৃ সাধনা শুরু করেন এবং দ্বিভূজা, ষোড়শীর বেশে রাজাকে দর্শন দিয়ে দেবী নির্দেশ করেন, এই জঙ্গলেই যেন তার মূর্তি প্রতিষ্ঠা এবং নিত্য পুজোর ব্যবস্থা করা হয়। আর রাজা যেন নিজের রাজ্যে ফিরে গিয়ে পুনরায় রাজধর্ম পালনে ব্রতী হন।সেই আদেশ অনুসারে স্থাপিত হয় রাজবল্লভী মায়ের মন্দির।সম্ভবত ব্রাহ্মণ বা উচ্চবর্ণের রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতা পান বলেই দেবীর নাম রাজবল্লভী।আজও পূজার্চনার রীতিনীতিতে নানা তান্ত্রিক ক্রিয়াকলাপ দেখা যায়। রাজবল্লভী দেবীর স্বভাবও রাজকীয়। তিনি প্রতি রাত্রে কাঠের পালঙ্কে নিদ্রা যান। রাতে হঠাৎ তামাক সেবনের ইচ্ছাও হয় মাঝে মাঝে। তাই মন্দিরের এক কোণেই প্রস্তুত রাখা থাকে গড়গড়া। তবে খাবারের বিষয়ে তাঁর কোনো আড়ম্বর নেই। কোনোরকম সম্বরা না দিয়ে প্রতিদিন সিদ্ধ ভোগ রান্না হয় মন্দিরের লাগোয়া রন্ধনশালায়। বহু ভক্তকে সেই ভোগ পরিবেশন করা হয়।ফিরে আসবো পরের পর্বে অন্য কোনো দেবী মহাত্ম নিয়ে।পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।