পুরান রহস্য – গয়াসুরের কথা

763

সনাতন ধর্মে যতগুলি পবিত্র তীর্থস্থানের উল্লেখ আছে গয়া তারমধ্যে অন্যতম বিভিন্ন হিন্দুপুরাণে গয়া নগরীর উল্লেখ আছে। রামায়ণে গয়া নগরীর মহিমার বর্ণনা দিয়েছেন স্বয়ং রামচন্দ্র|আজ গয়া নগরীর ইতিহাস ও গয়াসুরের জীবন নিয়ে লিখবো যার নাম অনুসারে গয়ার নাম রাখা হয়েছে|মধ্যযুগে মৌর্য শাসনকালে গয়া সুসম্পন্ন নগরী হিসেবে গয়া প্রতিষ্ঠিত হয়।পরে নন্দ, গুপ্ত, পাল বংশের রাজারা গয়া শাসন করে। এরপর গয়া চলে যায় মোগলদের হাতে।তারও পরে ইংরেজরা এই শহর দখল করে নেয়।পুরাণ অনুযায়ী, নিজের শরীরকে দেবতাদের মতো পবিত্র করার ইচ্ছায় প্রজাপতি ব্রহ্মার তপস্যা করেছিলেন বিষ্ণু ভক্ত গয়াসুর। ব্রহ্মার বরে গয়াসুরকে দর্শন করলেই দর্শনকারী স্বর্গে যেতে পারবেন যার ফলে প্রচুর পাপ এবং অন্যায় করেও শুধুমাত্র গয়াসুরের দর্শন করেই স্বর্গে যেতে শুরু করেন সকলে। দেবতারা বিপদে পড়েন। স্বর্গে ভিড় বাড়তে থাকে। অবশেষে দেবতারা গয়াসুরের কাছে নতুন কোনও পবিত্র স্থানের দাবি করেন। বিষ্ণুর কৌশলে গয়াসুর বলেন তিনি মাটিতে শুয়ে পড়লে তাঁর উপর যেন পবিত্রভূমি তৈরি হয়। গয়াসুরের দেহ প্রায় পাঁচ ক্রোশব্যাপী এক পর্বতে পরিণত হয়। গয়াসুরের ইচ্ছে ছিল, তাঁর শরীরের উপর তৈরি নগরীতে কেউ পিণ্ডদান করলে তিনি যেন স্বর্গে যান। ভগবান বিষ্ণু তাঁর সেই ইচ্ছে পূরণ করেন। এবং পরবর্তী সময়ে সেই পাহাড় ভেঙেই এই প্রাচীন নগরী সৃষ্টি হয়েছিল।গয়ার প্রাচীন নাম বিষ্ণু নগরী। একে জ্ঞান এবং মোক্ষলাভের ভূমি বলেও ডাকা হয়। ফল্গু নদীর তীরে অবস্থিত এই প্রাচীন নগরীতেই নাকি রাজা দশরথের নামে পিণ্ডদান করেছিলেন স্বয়ং রাম সীতা । তারপরেই নাকি রাজা দশরথ স্বর্গে প্রবেশ করতে পারেন। ধর্মীয় বিশ্বাস তারপর থেকেই হিন্দুরা মৃত পূর্ব পুরুষের পিণ্ডদানের জন্য গয়াধামে যান। মহাভারতে গয়াকে বলা হযেছে গয়াপুরী।গয়ায় রয়েছে বোধি বৃক্ষ যে বটগাছের নীচে ভগবান বুদ্ধ পরম জ্ঞান লাভ করেছিল|বর্তমানে মহাবোধি মন্দিরের পিছনেই রয়েছে এই প্রাচীন বৃক্ষ। রয়েছে মুচলিন্দ হ্রদ |বৌদ্ধদের বিশ্বাস, ভগবান বুদ্ধের ধ্যানের সময় ভয়ানক ঝড় ওঠে। ঝড়ের দাপটে বুদ্ধদেবের ধ্যান ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়। সেই সময় মুচলিন্দ সাপ বুদ্ধদেবকে রক্ষা করে। সাপের নামেই হ্রদের নাম হয় মুচলিন্দ হ্রদ।গয়ার খুব কাছেই অবস্থিত নালন্দা, পাটনা, রাজগীর, বৈশালী সহ একাধিক স্থান। ভারতের প্রাচীন ইতিহাসের বহু নিদর্শন রয়েছে সেখানে।সারা দেশে বিশেষ করে বাংলায় ঐতিহাসিক ও পৌরাণিক স্থানের সংখ্যা প্রচুর|তাদের সাথে জড়িয়ে আছে অসংখ্য কিংবদন্তী এবং অলৌকিক ঘটনা|আবার ফিরে আসবো অন্য কোনো পৌরাণিক স্থানের রহস্য নিয়ে আগামী পর্বে|পড়তে থাকুন |ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|