বর্তমানে একটি চলচিত্রের কল্যানে ব্রহ্মস্ত্র শব্দটি বেশ জনপ্রিয়|কিন্তু কি ওই ব্রহ্মস্ত্র তা জানতে গেলে আমাদের পুরান ও রামায়ন মহাভারত পড়তে হবে|জানতে হবে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের কথা|দীর্ঘ ১৮ দিন ধরে চলেছিল এই যুদ্ধ এবং যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছিলেন প্রায় ১৬০ কোটি মানুষ। এই বিপুল সংখ্যক প্রাণহানি কোনও সাধারণ অস্ত্রে কী ভাবে সম্ভব, সেই প্রশ্ন বার বার|মহাভারতে নানা রকম পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার হয়েছিল বলে দাবি করেন অনেকেই ব্রহ্মস্ত্র সহ মহাভারতে উল্লেখিত দৈব মারণ অস্ত্র নিয়ে আজ আলোচনা করবো|আধুনিক ঐতিহাসিকদের মতে মহাভারত রচিত হয়েছিল ১০০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে। পঞ্চপাণ্ডবের সঙ্গে ভয়ানক যুদ্ধে সামিল হয়েছিলেন ১০০ কৌরব-ভ্রাতা। মহাভারতের বর্ণনায় এমন বেশ কয়েকটি অস্ত্রের বর্ণনা পাওয়া যায়, যেগুলি তাদের ব্যাবহারে ও মারণ ক্ষমতায় পরমাণুঅস্ত্রের মতো। কিছু অস্ত্র এখনকার দিনের পরমাণু অস্ত্রের কথা মনে করিয়ে দেয় সহজেই।মহাভারত-সহ পুরাণে একাধিক জায়গায় ব্রহ্মাস্ত্রের উল্লেখ পাওয়া যায়। অন্যান্য অস্ত্রের তুলনায় এর মারণ ক্ষমতা অনেক বেশি। ব্যাপক ধ্বংসলীলা চালাতে সক্ষম বলেই এই অস্ত্র ব্যবহারে সেই সময়েও নিষেধাজ্ঞা ছিল। আর সমস্ত অস্ত্র ব্যর্থ হলে শুধুমাত্র অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটাতেই ব্রহ্মস্ত্র প্রয়োগ করা যাবে বলে নির্দেশ ছিল।যে লক্ষ্যের প্রতি ব্রহ্মাস্ত্র প্রয়োগ করা হবে, তা সম্পূর্ণ রূপে ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। এই অস্ত্র আমাদের শুধুমাত্র পরমাণু বোমার কথাই মনে করায়। বিশেষজ্ঞদের মতে ব্রহ্মাস্ত্র আসলে বহু পরমাণু বোমার সম্মীলিত শক্তি। এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা স্বয়ং এই অস্ত্র নির্মাণ করেছিলেন। এই অস্ত্র ব্যবহার করার ক্ষমতা হাতে গোণা কয়েকজনের কাছেই ছিল। কারণ ব্রহ্মাস্ত্রের অধিকারী হতে হলে ব্রহ্মাকে খুশি করা প্রয়োজন।ব্রহ্মশীর্ষ অস্ত্রর উল্লেখ ও আছে কিছু গ্রন্থে প্রাচীণ পুঁথি অনুসারে ব্রহ্মাস্ত্রের থেকেও চারগুণ বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন ছিল ব্রহ্মশীর্ষ অস্ত্র। ব্রহ্মার চার মুখ থেকে নির্গত শক্তির সমান ক্ষমতা ধরে এই অস্ত্র। ব্রহ্মশীর্ষ অস্ত্র মাত্র একবার প্রয়োগ করেই সমস্ত সৃষ্টিকে মুহূর্তের মধ্যে ছাইয়ে পরিণত করা সম্ভব। এমনকি ব্রহ্মশীর্ষ অস্ত্র প্রয়োগ করলে স্বর্গলোকও এর হাত থেকে রেহাই পেত না। এই অস্ত্র প্রয়োগ করা হলে উল্কা-বৃষ্টি হতো বলে জানা যায়|নারায়ণী অস্ত্র নামে আরো একটি অস্ত্র ছিলো মনে করা হয় রামায়ণে শুধুমাত্র রাম এবং মহাভারতে কেবল শ্রীকৃষ্ণ, দ্রোণ ও অশ্বত্থামা এই অস্ত্রের অধিকারী ছিলেন। অশ্বত্থামা কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে পাণ্ডবদের উপর এই অস্ত্র প্রয়োগ করেন। তখন সমস্ত ধরনের অস্ত্র একসঙ্গে আকাশ থেকে ঝরে পড়তে শুরু করে। কিন্তু কৃষ্ণ জানতেন কী ভাবে এই অস্ত্রকে শান্ত করতে হয়। তিনি পাণ্ডবপক্ষের সবাইকে বলেন সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের অস্ত্র ত্যাগ করে মাটিয়ে শুয়ে সম্পূর্ণ ভাবে নারায়ণী অস্ত্রের সামনে আত্মসমর্পণ করতে। তার ফলেই পাণ্ডবরা এই মারণ অস্ত্রের আঘাত থেকে রক্ষা পান।ব্রহ্মানন্দ অস্ত্র অন্যতম শক্তিশালী অস্ত্র ছিলো যার মহাভারতে উল্লেখ পাওয়া যায় মহাভারতে।বিশ্বের সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মার পাঁচ মুখের সঙ্গে সাদৃশ্য রয়েছে এই মারণাস্ত্রের। সমগ্র সৌরজগতের শক্তি নিহিত ব্রহ্মানন্দ অস্ত্রের মধ্যে। বশিষ্ঠ মুনি বিশ্বামিত্রের উদ্দেশ্যে একবার এই অস্ত্র প্রয়োগ করেছিলেন বলে পুরানে উল্লেখ আছে|সব শেষে বলবো পশুপতাস্ত্রর কথা|পশুপতাস্ত্র হল পশুপতি অর্থাত্ শিবের অস্ত্র। মহাদেবের কাছ থেকেই এই অস্ত্র লাভ করেন পঞ্চপাণ্ডব অর্জুন। মহাদেবের এই অস্ত্র ভয়ংকর শক্তিশালী এবং উল্লেখযোগ্য বিষয় হল চোখের দৃষ্টির মাধ্যেমেই এই অস্ত্র চালনা করা সম্ভব। তবে কেউ এই অস্ত্র তাঁর চেয়ে দুর্বল কারোর প্রতি নিক্ষেপ করতে পারবেন না। গোটা সৃষ্টি ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে পশুপতাস্ত্র। মহাভারতে কেবলমাত্র অর্জুন এবং রামায়ণে কেবল মাত্র যোদ্ধা ইন্দ্রজিত্ পশুপতাস্ত্র ব্যবহারের অধিকারী ছিলেন।যথা সময়ে ফিরে আসবো আগামী পর্বে|চলবে পৌরাণিক ও আধ্যাত্মিক বিষয় নিয়ে আলোচনা|পড়তে থাকুন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|