মন্দির রহস্য – দেবী ছিন্নমস্তার মন্দির

357

ভারতের প্রাচীন রহস্যময় মন্দিরগুলি নিয়ে বিগত দিনে বেশ কয়েকটি লেখা লিখেছি |সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আজ একটি বহু প্রাচীন ছিন্ন মস্তা দেবীর মন্দিরের কথা আপনাদের বলবো|মন্দিরটি অবস্থিত আমাদেরর প্রতিবেশী রাজ্য খন্ডে|বিখ্যাত পরিচক সত্যজিৎ রায়ের ছিন্নমস্তার অভিশাপ গল্পে এই মন্দিরের উল্লেখ আছে যা নিয়ে পরে চলচ্চিত্র ও হয়েছে|ছিন্ন মস্তা মন্দিরটি ৬০০০ বছরের পুরানো|মন্দিরের ভিতরে ছিন্নমস্তিকার দেবীর মূর্তিটি দেখতে আশ্চর্যজনক। পদ্মফুলের উপর তাঁর মূর্তি স্থাপিত। তাঁর তিনটি চোখ রয়েছে। ডান হাতে তলোয়ার আর বাম হাতে দেবী তাঁর নিজের বিচ্ছিন্ন মস্তক ধারণ করছেন। বিপরীত ভঙ্গিতে কামদেব এবং রতি দেবীর পায়ের নীচে শয়ন অবস্থায় উপবিষ্ট। মা দেবীর চুল খোলা ও ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তিনি একটি সর্প মালা এবং একটি মুণ্ড মালা পরে রয়েছেন। দেবী মা এখানে অলংকারে সুশোভিত। দিগম্বরী রূপেদেবী ছিন্ন মস্তার সুবিশাল আকার বিরাজমান।মন্দিরটি তার তান্ত্রিক স্থাপত্যশৈলীর জন্যও বিখ্যাত। বহু দুর থেকে তান্ত্রিক জ্যোতিষী ও সাধারণ ভক্তরা আসেন মায়ের কাছে কারন জ্যোতিষ ও তন্ত্র জগতে দেবী ছিন্নমস্তাকে রাহু গ্রহের ইষ্ট দেবী হিসেবে দেখা হয়|তার পুজো দিয়ে রাহু কে সন্তুষ্ট করা হয়|পুরান অনুসারে এক বার দেবী আদ্যাশক্তি তাঁর সখী দের সঙ্গে গঙ্গা নদীতে স্নান করতে গেলে তাঁর দুই সখী সেখানে কিছু ক্ষণ কাটানোর পর ক্ষুধার্ত হয়ে পড়েন। দুজনের ক্ষুধা এতই প্রবল যে, দু’জনের গায়ের রং পরিবর্তিত হতে শুরু করে এবং তা কালো হয়ে যায়। তখন তারা দেবী মায়ের কাছে খাবারের জন্য দাবি করতে থাকে। মা তাকে ধৈর্য ধরতে বলল। কিন্তু তারা ক্ষুধার জ্বালায় জ্বলছিল। বন্ধুদের অবস্থা দেখে নিজের মাথা কেটে ফেলেন দেবী মা। তাঁর শিরশ্ছেদ করার সময় নিজের মাথা বাম হাতে পড়ে যায়। সেখান থেকে রক্তের তিনটি স্রোত বইতে শুরু করে। দেবী মা নিজের দুই সঙ্গিনীর পান করার জন্য দু’টি স্রোত প্রদান করেন এবং তিনি নিজেই অবশিষ্ট স্রোত থেকে রক্ত পান করতে শুরু করেছিলেন।তার এই রূপই ছিন্নমস্তা নামে পরিচিত|শত্রুদের বিরুদ্ধে জয়লাভ করার জন্য ছিন্নমস্তা দেবীর বিশেষ পূজা করা হয়। এখানে মায়ের রূপ উগ্র।তন্ত্র মতে পুজো হয়|ভক্তরা দেবী ছিন্নমস্তিকার কাছে বলি দান এবং তন্ত্র সাধনার মাধ্যমে নিজেদের মনোবাঞ্ছা পূরণ করেন।ফিরে আসবো এমনই কোনো রহস্যময় প্রাচীন মন্দিরের কথা নিয়ে|আগামী পর্বে |পড়তে থাকুন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|