বিগত পর্বে আপনাদের বলেছি বিষ্ণু বরাহ অবতারে হিরণ্যাক্ষ নামে এক রাক্ষসকে বধকরেন ও পৃথিবীকে রক্ষা করেন এই হিরণ্যাক্ষের ভাই হিরণ্যকশিপু স্বাভাবিক ভাবেই প্রবল বিষ্ণুবিদ্বেষী হয়ে ওঠেন। তিনি বিষ্ণুকে হত্যা করার পথ খুঁজতে থাকেন।তিনি বহু বছর ব্রহ্মার কঠোর তপস্যা করেন। ব্রহ্মাও হিরণ্যকশিপুর তপস্যায় সন্তুষ্ট হন। তিনি হিরণ্যকশিপুর সম্মুখে উপস্থিত হয়ে তাঁকে বর দিতে চান। হিরণ্যকশিপু বলেন, আপনি আমায় এমন বর দিন যে বরে আপনার সৃষ্ট কোনো জীবের হস্তে আমার মৃত্যু ঘটবে না, আমার বাসস্থানের অন্দরে বা বাহিরে আমার মৃত্যু ঘটবে না, দিবসে বা রাত্রিতে, ভূমিতে বা আকাশে আমার মৃত্যু হবে না, শস্ত্রাঘাতে, মনুষ্য বা পশুর হাতে আমার মৃত্যু হবে না,।বাধ্য হয়ে ব্রম্হা তাকে ইচ্ছা মতো বর দেন|অত্যাচারি রাজা হিরণ্য কশিপু কে বধ করে অধর্মের উপর ধর্ম কে প্রতিষ্ঠা করতে বিষ্ণু অবতার নৃসিংহ দেব পৃথিবীতে অবতীর্ন হয়ে ছিলেন |তিনি বিষ্ণুর চতুর্থঅবতার|সাধারণত দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনের অন্যতম প্রতীক তিনি, তিনি বীরত্ব ও শৌর্যর ও প্রতীক তাই প্রাচীন কাল থেকে রাজারা বা শাসক রা তার উপাসনা করে আসছেন|পরবর্তীতে হিরণ্য কশিপুর পুত্র প্রহ্লাদ হয়ে ওঠেন পরম বিষ্ণুভক্ত।এতে তাঁর পিতা হিরণ্যকশিপু অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন। ক্রমে প্রহ্লাদের বিষ্ণুভক্তিতে হিরণ্যকশিপু এতটাই ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত হন যে তিনি নিজ পুত্রকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন। বিষ্ণু স্বয়ং নৃসিংহ অবতারে হিরণ্য কশিপুরকে বধ করে প্রহ্লাদকে রক্ষা করেন|দেবতা মানুষ বা পশু হলে হবেনা কারন ব্রহ্মার বর হিরণ্য কশিপুর কে রক্ষা করবে তাই নৃসিংহ পরিপূর্ণ দেবতা, মানব বা পশু নন; হিরণ্যকশিপুকে দিবসে বা রাত্রিতে বধ করা যাবে না, তাই নৃসিংহ দিন ও রাত্রির সন্ধিস্থল গোধূলি সময়ে তাঁকে বধ করেন; হিরণ্যকশিপু ভূমিতে বা আকাশে কোনো শস্ত্রাঘাতে বধ্য নন, তাই নৃসিংহ তাঁকে নিজ জঙ্ঘার উপর স্থাপন করে নখের আঘাতে হত্যা করেন; হিরণ্যকশিপু নিজ গৃহ বা গৃহের বাইরে বধ্য ছিলেন না, তাই নৃসিংহ তাঁকে বধ করেন তাঁরই নিজের গৃহদ্বারে।নৃসিংহ দেবের হাতে হিরণ্য কশিপুর বধ হলো কিন্তু নৃসিংহদেবের ক্রোধ কম হল না। তিনি ভয়ানক ধ্বংসলীলা চালিয়ে যেতে থাকেন। এই সময়ে সব দেবতারা একসাথে শিবের শরণ নেন। তাঁরা বুঝতে পারেন, একমাত্র মহাদেবই পৃথিবীকে রক্ষা করতে পারেন। শিব বীরভদ্র ও ভদ্রকালীকে প্রেরণ করেন নৃসিংহকে থামানোর জন্য। কিন্তু মহাপ্রতাপ নৃসিংহ সেই দুই মহাশক্তিকেও বিপর্যস্ত করে ফেলেন। এমতাবস্থায় মহাদেব নিজেই শরভ নামের এক বিচিত্রদর্শন প্রাণীর রূপ নিয়ে আবির্ভূত হন।শরভ এক সুবিশাল পাখি। তাঁর সহস্রবাহু এবং পশুর মতো দেহ|নৃসিংহ ও শরভ অবতারের মধ্যে ভয়ানক যুদ্ধ হয়|শরভের আঘাতে নৃসিংহ আত্মসংবরণ করেন। শরভই শেষ করেন নৃসিংহের লীলা।নৃসিংহ দেবের ক্রোধ থেকে রক্ষা পায় সৃষ্টি |শিব নিজে একজন পরম বৈষ্ণব এবং নৃসিংহ দেব স্বয়ং বিষ্ণু| ভক্তের দ্বারা ভগবানের বধ বা ভক্ত এবং ভগবানের যুদ্ধ সনাতন ধর্ম শাস্ত্রের অতি বিরল ঘটনা|এই যুদ্ধ ও দুর্লভ অলৌকিক ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায় নৃসিংহ পুরান ও শিব পুরানে |আগামী পর্বে যথা সময়ে ভগবানের পরবর্তী রূপ সহ তার বিশেষ লীলা নিয়ে আবার ফিরে আসবো|চলতে থাকবে এই পৌরাণিকআলোচনা|পড়তে থাকুন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|