পুরান কথা – ছাপ্পান ভোগ

406

আমাদের সনাতন ধর্মে পবিত্র চার ধাম হল- বদ্রীনাথ ধাম,দ্বারিকা ধাম,পুরী ধাম এবং রামেশ্বরম। প্রথমে হিমালয়ের শিখরে অবস্থিত বদ্রীনাথ ধামে স্নান করেন,তারপর গুজরাটের দ্বারিকা ধামে গিয়ে বস্ত্র পরিধান করেন, ওড়িশার পুরী ধামে ভোজন করেন আর সবশেষে রামেশ্বরমে গিয়ে বিশ্রাম নেন।পুরী ধামে যেখানে তিনি ভোজন করেন সেখানে ভোগের কোনও চমক থাকবে না এটা কখনও হয়। সেখানেই তাঁকে ছাপ্পান্ন ভোগ দেওয়া হয়। আজ আসুন জেনে নিই কী এই ছাপ্পান্ন ভোগ| পুরাণ মতে, যশোদা বালক কৃষ্ণকে আট প্রহর খেতে দিতেন। যখন ইন্দ্রের রোষে পড়ে মহাপ্রলয়ের সৃষ্টি হয়েছিল। সেই সময় প্রাণীদের রক্ষা করতে নিজের কনিষ্ঠ আঙুলে গোবর্ধন পাহাড় তুলে নিয়েছিলেন তিনি। সাতদিন ওইভাবেই তিনি ছিলেন। খাবার ও জল কোনও কিছুই মুখে দেননি। প্রলয় বন্ধ হওয়ার পর সেই পাহাড় নামিয়ে রেখেছিলেন। এদিকে যে ছেলে দিনে আটবার খাবার খেত তাকে টানা সাতদিন অনাহারে থাকতে দেখে কেঁদে উঠেছিল যশোদার মন। তখন ব্রজবাসী-সহ যশোদা সাতদিন ও আট প্রহরের হিসেবে কৃষ্ণের জন্য ৫৬টি পদ পরিবেশন করেছিলেন। আর সেই থেকেই নারায়ণের ছাপ্পান্ন ভোগ চলে আসছে।পুরীর জগন্নাথদেবের মন্দিরে রয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম রান্নাঘর। সেখানে বিশেষ পদ্ধতিতে রান্না হয় ছাপ্পান ভোগ|জগন্নাথের ভোগে মূলত দুই ধরনের খাবার দেওয়া হয়। ভাত, ডাল, তরকারি, খিচুড়ি জাতীয় রান্না করা খাবার থাকে। আর থাকে খাজা, গজা, খই, মুড়কি জাতীয় শুকনো খাবার। মূলত ফুটন্ত জলে সবজি এবং মশলা দিয়ে চলতে থাকে মহাপ্রভুর রান্না। মশলা বলতে শুধুমাত্র নুন এবং হলুদের ব্যবহার। পেঁপে, আলু, টমেটো, কাঁচা লঙ্কা জাতীয় সবজি জগন্নাথের রান্নায় ব্যবহার করা হয় না। বাল্যভোগে জগন্নাথদেবকে দেওয়া হয় খই, চিঁড়ে, বাতাসা, মাখন, মিছরি, কলা, দই এবং নারকেল কোরা। এরপর দেওয়া হয় রাজা ভোগ। এই তালিকায় থাকে মিষ্টি চালের খিচুড়ি, ডাল, তরকারি, ভাজা এবং পিঠেপুলি। দুপুরের ভোগ মূলত অন্নভোগ। সেখানে থাকে ভাত, ডাল, শুক্তো, তরকারি ও পরমাণ্ণ। এছাড়াও থাকে ক্ষীর ও মালপোয়া। সন্ধেবেলায় দেওয়া হয় লেবু, দই দিয়ে মাখা পান্তাভাত। সঙ্গে খাজা, গজা এবং নানা ধরনের মিষ্টি। রাত ১১টার সময় ভাজা ও ক্ষীর দেওয়া হয় তাঁকে। আর মধ্যরাতে ডাবের জল খেয়ে শুতে যান ভগবান। এভাবেই তাঁক ছাপ্পান্ন ভোগ অর্পণ করা হয়ে থাকে।রথ যাত্রা উপলক্ষে চলতে থাকবে প্রভু জগন্নাথ ও তার নানা লীলা নিয়ে আলোচনা|পড়তে থাকুন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|