কালী তীর্থ – মানকরের বড়োমা কালী

339

আজ কালী তীর্থতে বর্ধমানের মানকরের বড়মাকালীর কথা বলবো|শোনা যায় এই গ্রামে আজ থেকে প্রায় সাতশো বছর আগে কালী পূজা শুরু করেন রামানন্দ গোস্বামী । তিনি ছোটবেলা থেকে কালী মায়ের একনিষ্ঠ সাধক ছিলেন । কাব্যতীর্থ পাশ করার পর বেশীর ভাগ সময়ে শ্মশানে পড়ে থাকতেন । তাঁর বাবা দেবভক্ত হলেও কৃষ্ণমন্ত্রে দীক্ষিত হওয়ার জন্য পুত্রের কালী-মা ভক্তি মোটেই পছন্দ করতেন না তবে পরবর্তীকালে কঠোর সাধনা করে মায়ের দর্শন পেয়ে ছিলেন রামানন্দ গোস্বামী । মায়ের সঙ্গে কথাও বলেছিলেন ঠাকুর রামানন্দ । তাঁর সাধনার স্থান ছিল কাশ আর বেতবনে ঘেরা শ্মশান বর্তমানে যা মানকর ভট্টাচার্য পাড়া নামে খ্যাত।বলা হয়, বড় মা কালী নাকি তিন বোন । মেজ বোন মানকর ডাঙাপাড়ায় ক্ষ্যাপা কালী, আর এক বোন পাল পাড়ায় পঞ্চানন কালী ।মন্দির প্রসঙ্গে একটি অলৌকিক ঘটনার কথাও শোনা যায় ঘটনাটি হলো সাধক রামানন্দ শ্মশানে ধ্যানে মগ্ন । পাড়ার কেউ তাঁর বাবাকে এই খবর দিয়েছেন । তাঁর কৃষ্ণভক্ত বাবা শ্মশানে এসে শুধু কৃষ্ণ ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাননি ।পরবর্তীকালে মায়ের সেবার দায়িত্ব আসে ঠাকুর বাণীকণ্ঠ ভট্টাচার্যের হাতে । তিনি ছিলেন মানকরের তৎকালীন জমিদার সদাশিব ভট্টাচার্যের বংশধর ।আরো একটি অলৌকিক ঘটনা আছে , একদিন এক শাঁখারী মায়ের পুকুর পাড় দিয়ে যাচ্ছেন । এমন সময় একটি কালো বরণ বাচ্চা মেয়ে তাঁর কাছে শাঁখা পরতে চায় । শাঁখারী দু-হাতে শাঁখা পরাতেই আরও দুটি হাত বাড়িয়ে দেয় ওই মেয়েটি । শাঁখারী হতবাক হলেও আবারও দুটি শাঁখা পরিয়ে টাকা চায় । মেয়েটি তখন উত্তরে জানায়,’ মন্দিরের কুলুঙ্গিতে বেলপাতা ঢাকা দু-টাকা রাখা আছে ছেলেকে দিতে বলবি ।’শাঁখারী তাঁর কথা মতো বাণীকণ্ঠ ঠাকুরের কাছে সমস্ত কথা বলেন । ঠাকুর অবাক হলেও দু-টাকা সেখান থেকে দিয়ে শাঁখারীকে বলেন, আমার কোন মেয়ে নেই । যে মেয়েটি তোমার শাঁখা পরেছে তাঁর কাছে নিয়ে চল । শাঁখারী বাণীকণ্ঠকে নিয়ে গেলেও মেয়েটিকে আর দেখতে পায়নি । তখন ঠাকুর বুঝতে পেরে পুকুর পাড়ে দাঁড়িয়েই মাকে শাঁখা দেখানোর অনুরোধ করেন । সন্তানের অনুরোধে মা কালী স্বয়ং পুকুরের মাঝে চার হাত তুলে শাঁখা দেখায় । সেই থেকে ওই শাঁখারীর বংশধরেরা এখনও মায়ের পুজোয় শাঁখা দিয়ে যায়এই মন্দিরে দূর্গা পুজো হয় তবে রাত্রে মায়ের প্রতিমা তৈরীর কাজ নিষিদ্ধ । কথিত আছে বহু বছর আগে একবার এক প্রতিমাশিল্পী রাত্রে মায়ের চক্ষুদান করছেন । ওই সময় এক অদৃশ্য হাত প্রতিমা নির্মাণে বাঁধা দেয় তখন থেকে আজও মায়ের প্রতিমা দিনেই তৈরী করা হয়বাণীকণ্ঠ ঠাকুরের বর্তমান বংশধরদের উদ্যোগে নতুন মন্দির তৈরী করা হয়েছে|প্রতিটি বিশেষ তিথিতে বিশেষ পুজো উপলক্ষে জন সমাগম হয় ব্যাপক|আগামী পর্বে অন্য কোনো কালী মন্দিরের কথা নিয়ে আবার ফিরে আসবো|দেখতে থাকুন কালী ক্ষেত্র|