কালীতীর্থ – হুগলী ডাকাতকালী মন্দির

352

আজ কালী তীর্থর এই পর্বে আপনাদের জন্যে নিয়ে এসেছি বাংলার এক প্রাচীন ডাকাত কালী মন্দিরের কথা যা অবস্থিত হুগলীর বাসুদেব পুরে|ত্রিবেণী ডাকাত কালী নামেও এই মন্দির পরিচিত|বাংলার এই ডাকাত কালী মন্দিরের সাথে জড়িত আছে কুখ্যাত রঘু ডাকাতের নাম|সাধক রামপ্রসাদ ও এই মন্দিরে এসেছিলেন ও এক অলৌকিক অভিজ্ঞতার সাক্ষী হয়েছিলেন|রঘু ডাকাতের আমল থেকেই মন্দিরের পুজো চলছে। মন্দিরে নরবলির প্রথা বহু পূর্বে বন্ধ হয়েছে। তবে এখনও মানত করা| ছাগবলি হয়|এই ডাকাত কালী মন্দিরের ইতিহাস বেশ প্রাচীন ও রোমাঞ্চকর|শোনা যায় আনুমানিক ৫০০ বছর আগে বাগহাটির জয়পুরের বাসিন্দা বিধুভূষণ ঘোষ ও তার ভাই রঘু ঘোষ ঘন জঙ্গলের মধ্যে হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী তাদের মায়ের মূর্তি স্থাপন করে। দিনের বেলায় দুই ভাই দিনমজুরের কাজ করলেও রাতে ধনীদের বাড়িতে ডাকাতি করত যদিও ডাকাতি করে আনা জিনিসপত্র এলাকার গরিব মানুষের মধ্যে বিলি করত এই দুই ডাকাত|সেকালে ডাকাত দলের ভয়ে দুপুরের পর থেকে এই রাস্তা দিয়ে মানুষ চলাচল করত না। কথিত আছে সেই সময়েরঘু ডাকাতের লোকজন রাস্তা দিয়ে যাওয়া কোনও মানুষকে ধরে বেঁধে রাখত। সন্ধ্যার পর পুরোহিতকে ডেকে এনে ঢাকঢোল বাজিয়ে নরবলি হতো| তারপর পুজো দিয়ে ও মহাপ্রসাদ খেয়ে ডাকাতি করতে বের হত। লুঠ করে সেই টাকার কিছুটা অংশ গরিবদের মধ্যে বিতরণ করত|সাধক কবি রামপ্রসাদ সেন কোনও এক সময়ে এই রাস্তা ধরে ফিরছিলেন। ওই সময়ে রঘু ডাকাতের লোকজন তাকে নরবলি দেওয়ার জন্য ধরে নিয়ে এসে বেঁধে রাখে। অলৌকিক ভাবে ডাকাত দল বলি দেয়ার আগের মুহূর্তে হারিকাঠে রামপ্রসাদের পরিবর্তে মাকে দেখতে পায়। এরপর থেকে রঘু ডাকাত বলি বন্ধ করে রামপ্রসাদের সেবার ব্যবস্থা করে এবং পরের দিন সকালে নৌকায় করে রামপ্রসাদকে সসম্মানে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসে।এখানে চতুর্ভুজা কালিকার ঊর্ধ্ব বাম হস্তে খড়্গর পরিবর্তে রয়েছে তরবারি ও অন্যান্য হাতগুলিতে রয়েছে দেবী কালিকার মতোই নানা প্রহরণ৷ দেবী জোড় পায়ে শবরূপী শিবের হৃদপদ্মে দণ্ডায়মান৷ মায়ের মুখোমুখি মন্দির অঙ্গনে স্থাপিত শিবলিঙ্গ৷ রয়েছে জটাজাল বিস্তৃত প্রাচীন বটবৃক্ষ৷আজও রঘু ডাকাত কতৃক স্থাপিত এই কালী মন্দিরে পুজো হয়|বিশেষ বিশেষ তিথিতে বিশেষ পুজো ও সেই উপলক্ষে বহু মানুষের সমাগম হয়|বাংলার নানা স্থানে রয়েছে এমন বহু প্রাচীন ঐতিহাসিক কালী মন্দির|আগামী পর্বে আবার অন্য কোনো কালী মন্দিরের কথা লিখবো আপনাদের জন্য|পড়তে থাকুন|ধন্যবাদ|