মা মনসার উৎপত্তি ও পূজার প্রচলন

2488




আজ মা মনসার পূজার দিন|মনসা পূজা প্রধানত বাংলা ও উত্তর ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে প্রচলিত। বর্ষার প্রকোপে এ সময় সাপের বিচরণ বেড়ে যায়, তাই সর্পদংশন প্রতিরোধ ও সাপের বিষের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে তাঁর পূজা করা হয়। বাঙালি মেয়েরা শ্রাবন মাসের নাগ পঞ্চমীর দিন উপবাস ব্রত করে সাপের গর্তে দুধ ঢালেন।অধিকাংশ ক্ষেত্রে, প্রতিমায় মনসা পূজা করা হয় না। মনসা পূজিতা হন বিশেষভাবে সর্পচিত্রিত ঘট বা ঝাঁপিতে। যদিও কোথাও কোথাও মনসা মূর্তিরও পূজা হয়। দেবী মনসা একদিকে যেমন লৌকিক দেবী অন্যদিকে পুরানে এমনকি মহাভারতেও তার উল্লেখ রয়েছে|মনসার স্বরূপ ও তার উৎপত্তি এবং পরিচয় নিয়ে একাধিক শাস্ত্রে কিছু পরস্পর বিরোধী তত্ব উপস্থিত রয়েছে| মা মনসা হিন্দুধর্মের লৌকিক সর্পদেবী। মধ্যযুগের লোককাহিনী বিষয়ক মনসামঙ্গল কাব্যের প্রধান চরিত্র। সর্পদেবী হিসেবে মনসার প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় হিন্দু ধর্মগ্রন্থ অথর্ববেদে। পুরাণে তাঁকে ঋষি কাশ্যপ ও নাগ-জননী কদ্রুর কন্যা বলা হয়েছে। খ্রিস্টীয় ১৪শ শতাব্দী নাগাদ মনসা প্রজনন ও বিবাহের দেবী হিসেবে চিহ্নিত হন এবং শিবের আত্মীয় হিসেবে শৈব দেবমণ্ডলীর অন্তর্ভুক্ত হন। কিংবদন্তি অনুযায়ী, শিব বিষপান করলে মনসা তাঁকে রক্ষা করেন সেই থেকে তিনি বিষহরি নামে পরিচিতা হন। মনসার জন্মকাহিনি প্রথম উল্লিখিত হয়েছে পুরাণ গ্রন্থেই মঙ্গলকাব্যে তাঁকে শিবের কন্যা বলা হলেও, অন্য একটি পুরাণ অনুসারে তিনি ঋষি কশ্যপের কন্যা।পুরা কালে সর্প ও সরীসৃপগণ পৃথিবীতে কলহ শুরু করলে কশ্যপ তাঁর মন থেকে মনসার জন্ম দেন। ব্রহ্মা তাঁকে সর্প ও সরীসৃপদের দেবী করে দেন। মনসা মন্ত্রবলে বিশ্বের উপর নিজ কর্তৃত্ব স্থাপন করেন। এরপর মনসা শিবের সঙ্গে সন্ধিস্থাপন করেন। শিব তাঁকে কৃষ্ণ-আরাধনার উপদেশ দেন। মনসা কৃষ্ণের আরাধনা করলে কৃষ্ণ তুষ্ট হয়ে তাঁকে সিদ্ধি প্রদান করেন এবং প্রথামতে তাঁর পূজা করে মর্ত্যলোকে তাঁর দেবীত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। মহাভারতে মনসার বিবাহের উল্লেখ রয়েছে। ঋষি জগৎকারু এক প্রচণ্ড তপস্যায় রত ছিলেন। তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে বিবাহ করবেন না। একদা তিনি দেখতে পান যে একদল লোককে গাছে উলটো করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এঁরা ছিলেন তাঁরই পূর্বপুরুষ। তাঁদের সন্তানেরা তাঁদের শ্রাদ্ধাদি সম্পূর্ণ না করায় তাঁদের এই দুঃখজনক অবস্থা হয়েছিল। তাঁরা জগৎকারুকে বিবাহ করার উপদেশ দিয়ে বলেন যে তাঁর পুত্রই শ্রাদ্ধাদি সম্পূর্ণ করে তাঁদের দুঃখ থেকে মুক্তি দিতে পারবে। বাসুকী জগৎকারুর সঙ্গে নিজ ভগিনী মনসার বিবাহ দেন। আস্তিক নামে তাঁদের একটি পুত্রসন্তান হয়। আস্তিক তাঁর পূর্বপুরুষদের মুক্তি দেন। রাজা জনমেজয় সর্পজাতির বিনাশার্থে সর্পনিধন যজ্ঞ শুরু করলে আস্তিকই নাগদের রক্ষা করেন। মনসাবিজয় কাব্য থেকে জানা যায়, বাসুকীর মা একটি ছোটো মেয়ের মূর্তি নির্মাণ করেছিলেন। শিবের শিবের ক্রিপায় এই মূর্তি থেকেই মনসার জন্ম হয় এবং পরবর্তীতে বাসুকী তাঁকে নিজ ভগিনীরূপে গ্রহণ করেন। বাসুকী তার কাছে গচ্ছিত বিষের ভান্ডার মনসাকে দেন যা পরবর্তীতে মনসার শক্তির উৎস হয়ে ওঠে| অর্থাৎ মনসার উৎপত্তি মূলত পুরানে বর্ণিত এবং তার জনপ্রিয়তা ও পুজোর প্রচার তাকে বাংলার লৌকিক দেবী হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত করেছে|প্রনাম জানাই মা মনসা কে|আবার যথা সময়ে ফিরে আসবো পুরান সম্পর্কিত কোনো নতুন পর্ব নিয়ে|জ্যোতিষ সংক্রান্ত প্রয়োজন বা তন্ত্র মতে সমস্যার সমাধানে যোগাযোগ করতে পারেন উল্লেখিত নাম্বারে|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|