ভারতের সাধক – শ্রী শ্রী রামদাস কাঠিয়া বাবাজি

834

ভারতের সিদ্ধ যোগী দের মধ্যে অন্যতম একটি নাম শ্রী শ্রী রামদাস কাঠিয়া বাবাজি|তিনি আধ্যাত্বিক জগতের সিদ্ধ সাধকদের মধ্যে একজন এবং তার জীবন ও সাধনা আজও তার অসংখ্য ভক্ত ও অনুরাগীর ম্যধ্যে এক রহস্য স্বরূপ|

পাঞ্জাবের এক সাধারন মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্ম নিয়ে কিকরে তিনি এতো উচ্ছ কোটির যোগী হয়ে উঠলেন তা নিয়েও একটি অলৌকিক ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায়| তাঁর কৈশোরে একবার মাঠে মহিষ চরাতে চরাতে তিনি একজন উজ্জ্বলকান্তি সাধু পুরুষের দর্শন লাভ করলেন। সাধুজী তাঁর নিকট কিছু আহার যাচনা করলে, কাঠিয়া বাবাজী মহারাজ নিজ গৃহ থেকে প্রচুর পরিমানে ময়দা, চিনি, ঘি, আদি তাঁকে এনে দিলেন। সাধু প্রসন্ন হয়ে তাঁকে বরদান করলেন যে, “তুমি যোগীরাজ হবে।” এই বরদান করে সাধু অন্তর্হিত হলেন। তখন সেই সময় কাঠিয়া বাবাজী মহারাজের মনে হল যেন সংসারের প্রতি তাঁর সমস্ত আসক্তি কেটে গেছে|ক্রমে তিনি আধ্যাত্মিক সাধনার পথ বেছে নিলেন শুরু করলেন শাস্ত্র পাঠ ও ধ্যান|

তিনি গায়ত্রী মন্ত্রে সিদ্ধি লাভের জন্য জপ করতে লাগলেন এবং শেষে তিনি গায়ত্রীতে সিদ্ধি লাভও করলেন|কথিত আছে স্বয়ং গায়ত্রীদেবী আবির্ভূত হয়ে তাঁকে দর্শন দিয়ে কৃতার্থ করেন|পরবর্তীতে বিরাট জটা-জুটধারী এক সাধুকে তিনি দর্শন করে তাঁর প্রতি ভীষণ ভাবে আকৃষ্ট হন ও তৎক্ষণাৎ তাঁর নিকট আত্মসমর্পণ করে তার কাছে দীক্ষা ও সন্ন্যাস গ্রহণ করলেন।সেই সাধু ছিলেন আচার্য, শ্রীশ্রী দেবদাসজী কাঠিয়া বাবাজী মহারাজ যিনি ছিলেন যোগীশ্বর সিদ্ধ মহাপুরুষ|

সন্ন্যাস গ্রহণের পর কাঠিয়া বাবার নামকরণ হল, “রামদাস”। গুরুর সন্নিধানে থেকে তিনি সর্বতোভাবে গুরুসেবায় নিযুক্ত থাকতেন। তাঁর গুরুদেব তাঁকে হঠযোগের সঙ্গে অষ্টাঙ্গযোগ ও মন্ত্র শিক্ষা দিতে শুরু করলেন তবে সাধনার এই পর্যায় ছিলো অত্যন্ত কঠিন|পদে পদে গুরু শিষ্যের কঠিন পরীক্ষা নিতেন|একবার গুরু দেব নির্দেশ দিলেন যে, “যত ক্ষণ না আমি ফিরে আসি তুমি এখানে এই আসনে বসে থাকবে। আসন ছেড়ে অন্য জায়গায় কোথাও যাবে না।” গুরুদেব যে গেলেন ত এলেন আট দিন পরে। শ্রীরামদাসজী আট দিন একটানা সেই আসনে বসে রইলেন, কিছু আহার করলেন না, প্রকৃতির ডাকেও সারা দিলেন না অষ্টম দিনে গুরুদেব ফিরে এলে শ্রীরামদাসজী আসন থেকে উঠে গুরুদেবকে সাষ্টাঙ্গ প্রণাম করলেন। তাঁর গুরু আজ্ঞা পালনের প্রতি এই একনিষ্ঠতা ও দৃঢ়তা দেখে গুরুদেব খুব প্রসন্ন করলেননা|

এক্ষেত্রে আরেকটি ঘটনার উল্লেখ করা যায় একদিন হঠাৎ গুরু তার শ্রীরাম দাসজীকে বেদম পেটাতে লাগলেন, চিমটা আদি দিয়ে এমন মারতে লাগলেন যে শ্রীরামদাসজীর অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ফুলে উঠল। মারতে মারতে তিনি বললেন, “তুই কেন আমার পিছনে পড়ে আছিস্, আমার সব বড় বড় চেলা আমাকে ছেড়ে চলে গেছে, তুইও চলে যা। আমি কারুর সেবা চাই না।” শ্রী রামদাসজী গুরুদেবকে বিনীত ভাবে বললেন, “মহারাজ, আমি আপনাকে সাক্ষাৎ ভগবান মনে করি, সেই জন্য আপনাকে ছেড়ে ত আমি কোথাও যাব না। তবে এই রকমও আর সহ্য করতে পারছি না। আমি আপনাকে ছুরি দিচ্ছি আপনি আমার গলা কেটে নিন্, কিন্তু প্রাণ থাকতে ত আমি আপনাকে ছেড়ে অন্য কোথাও যাব না।” শিষ্যের এই বিনীত ও আর্ত কথাগুলি শুনে গুরুদেব প্রসন্ন হয়ে বললেন, “আজকে তোমাকে আমি শেষ বার পরীক্ষা করলাম, তোমার সেবায় ও গুরুভক্তিতে আমি প্রসন্ন হয়েছি। আমি বরদান করছি যে তোমার সর্বাভীষ্ট সিদ্ধ হবে, তুমি ইষ্টদেবের সাক্ষাৎকার পাবে,” ইত্যাদি বহু বর শ্রীরামদাসকে প্রদান করলেন|

সাধনার সকল স্তর অতিক্রম করে সিদ্ধি লাভ করে প্রকৃত অর্থে যোগিরাজ হয়ে উঠেছিলেন রাম দাস বাবাজি|সারা ভারতের তীর্থ দর্শন করে বৃন্দাবনে পাকাপাকি ভাবে থাকতে শুরু করেছিলেন তিনি|নির্বাক সম্প্রদায়ের গুরুদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম শ্রেষ্ট গুরু ও সাধক যার কাছে দীক্ষা নিয়েছেন অসংখ্য মানুষ যার মধ্যে রয়েছেন বহু বাঙালি|তিনি অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন যার পরিচয় পাওয়া যায় একাধিক ঘটনায়
তিনি দেহে থাকাকালীন নিজেরই ছবি থেকে বহির্গত হয়ে একজনকে দীক্ষা দিয়েছিলেন। আকাশমার্গে বৃন্দাবন থেকে কলকাতায় আগমন করে অপর একজনকে মন্ত্র প্রদান করেছিলেন। তিনি এক কালে দুই পৃথক স্থানে ভক্তদের দর্শন দান করতে সমর্থ ছিলেন। শুধু তাই নয়, এখনো পর্যন্ত তিনি কোন কোন ভক্তকে প্রত্যক্ষদর্শন প্রদান করে থাকেন। তাঁর জীবনের সম্পূর্ণ বিবরণ এই স্থানে দেওয়া অসম্ভব। ১৩১৬ বঙ্গাব্দে ৮ই মাঘের ভোর রাত্রে এই মহাপুরুষ স্বেচ্ছায় যোগাসনে স্থিত হয়ে পরলোক গমন করেন|

প্রনাম জানাই এই মহান সাধককে|পড়তে থাকুন|জ্যোতিষ সংক্রান্ত প্রয়োজনে উল্লেখিত নাম্বার যোগাযোগ করুন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|