গুরু কথা – ঠাকুর রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব

1961

গুরু পূর্ণিমা উপলক্ষে গুরুদের নিয়ে যে আলোচনা শুরু করেছি তা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে যদি প্রেমের ঠাকুর ও বাংলার আধ্যাত্মিক জগতের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র ঠাকুর রামকৃষ্ণদেব প্রসঙ্গে না বলি|গুরু পূর্ণিমার ঠিক আগে আজ লিখবো এই মহান গুরুর কথা|

রামকৃষ্ণ পরমহংস সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর “পরমহংস রামকৃষ্ণদেবের প্রতি” কবিতাটি লিখেছিলেন:

বহু সাধকের বহু সাধনার ধারা,
ধেয়ানে তোমার মিলিত হয়েছে তারা;
তোমার জীবনে অসীমের লীলাপথে
নূতন তীর্থ রূপ নিল এ জগতে;
দেশ বিদেশের প্রণাম আনিল টানি
সেথায় আমার প্রণতি দিলাম আনি।

কবি গুরুর এই কবিতা থেকে আধ্যাত্বিক জগতে ঠাকুর রামকৃষ্ণের গুরুত্ব খুব ভালো করেই বোঝা যায়|তবু রামকৃষ্ণ স্মরণে কয়েকটি কথা লিখে দেয়া ভালো|১৮৩৬ সালে একটি সাধারণ বাঙালি গ্রামীণ পরিবারে জন্মগ্রহণকারী রামকৃষ্ণ ছিলেন একজন সাধারণ যোগসাধক, দার্শনিক ও ধর্মগুরু। তিনি উনিশ শতকের এমন এক ব্যক্তিত্ব যিনি বাঙালি নবজাগরণে এক পঞ্চমুখ ভূমিকা রেখেছিলেন। তার গর্ভে থাকাকালীন তার বাবা-মা আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গি অনুভব করেছিলেন এবং যেমনটি প্রত্যাশা করা হয়েছিল, তিনি শৈশবকালেই তিনি রহস্যময় ও অলৌকিক শক্তির অভিজ্ঞতা অর্জন শুরু করেছিলেন। তিনি বাংলায় হিন্দু ধর্মের পুনর্জাগরণের ক্ষেত্রে প্রধান ব্যক্তি ছিলেন|গুরু শিষ্য পরম্পরার মাধ্যমে ও বিবেকানন্দের নেতৃত্বে তৎকালীন বাংলার শিক্ষিত যুব সমাজের একটি বড়ো অংশ যুক্ত হয় রামকৃষ্ণর আধ্যাত্মিক কর্ম কাণ্ডের সাথে|

শ্রী রামকৃষ্ণ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এসেছিলেন তার লীলা করতে, পরমহংসদেব যখন জগৎ সমক্ষে উদয় হন, তখন ঘোরতর ধর্মবিপ্লব চলছে চারপাশে, “জড়বাদী মুক্তকণ্ঠে বলছেন – “জড় হইতেই সমস্ত,জড়ের সংযোগেই আত্মা, জড় ব্যতীত আর কিছু নাই “
ব্রাহ্ম সমাজ বলছে – “বেদ, বাইবেল, কোরান প্রভৃতি কিছুই মানিবার আবশ্যক নাই, কোনটিই অভ্রান্ত নয়, কোনটিই ঈশ্বর বাক্য নয়”
এমন সময় পরমহংসদেব প্রচার করলেন “কোন ধর্ম কোন ধর্মের বিরোধী নয়। বাহ্য দৃষ্টিতেই বিরোধ কিন্তু সকল ধর্মই মূলত এক কথা বলে
আরো সহজ করে বললেন ” যত মত ততো পথ “

কথিত আছে, ঠাকুর যখন জন্মগ্রহন করেছিলেন, কামারপুকুর বাটিতে তাদের শিব মন্দির চন্দ্রালোতে আলোকিত হয়ে উঠেছিল। রামকৃষ্ণদেবের গড়নে ছিল দৈবিকভাব|
সেটাই স্বাভাবিক, তিনি কোনো স্বাভাবিক মানুষ ছিলেন না, একাধারে সাধক ও দার্শনিক এই মানুষ টাকে হয়তো এখনো বাঙালি ঠিক চিনে উঠতে পারেনি, তার অবতার তত্ত্ব নিয়েও দ্বিমত আছে, তবে, সাধনার যে উচ্চস্তরে তিনি গিয়েছিলেন তা, কল্পনা করা কঠিন|

১৮৬১ সাল থেকে ১৮৬৩ সাল পর্যন্ত মহিলা সাধু এবং ভৈরবী ব্রাহ্মণীর কাছ থেকে তন্ত্র পদ্ধতি শিখেছিলেন। রামকৃষ্ণ তন্ত্রের ৬৪ টি সাধনা পূরণ করেছিল|১৮৬৪ সালে তোতাপুরী নামক জনৈক পরিব্রাজক বৈদান্তিক সন্ন্যাসীর কাছ থেকে রামকৃষ্ণ সন্ন্যাস গ্রহণ করেন|পরবর্তীতে বিদায় বেলায় তোতাপুরী আবার তার এই শিষ্যের কাছে দীক্ষা গ্রহন করেন|গুরু শিষ্য পরম্পরার এ এক বিরল ঘটনা|

তিনি শিব জ্ঞানে জীব সেবার আদর্শে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন তার ভাব শিষ্য নরেন কে, সেই আদর্শ আজও এগিয়ে নিয়ে চলেছে রামকৃষ্ণ মঠ,গুরু পূর্ণিমা তিথিকে মহা সমারোহে উদযাপন করা হয় মঠের প্রতিটি শাখায়,গুরু পূর্ণিমার প্রাক্কালে প্রনাম ও শ্রদ্ধা জানাই এই মহান সাধকে, চরনে রইলো শত কোটি প্রনাম|এবার আসুন জেনে নিই ঠাকুর রামকৃষ্ণর জন্মছক কি বলছে|

বেশ অল্প সময়ের মধ্যে অর্থাৎ ১৮৭৯ থেকে ১৮৮৫ সালের মধ্যবর্তী সময়ে নিজের প্রধান শিষ্যদের সঙ্গে রামকৃষ্ণ পরমহংসের সাক্ষাৎ হয়। এঁদের অনেকেই ছিলেন উচ্চ শিক্ষিত। কেউ আবার ছিলেন একান্তই নাস্তিক|নিছক কৌতূহলের বশেই তাঁরা শ্রীরামকৃষ্ণকে দেখতে এসেছিলেন। কিন্তু শ্রীরামকৃষ্ণের উপদেশ এঁদের সকলের মধ্যেই গভীর প্রভাব বিস্তার করে এবং এঁরা সকলেও তাঁর অনুরাগী ভক্তে পরিণত হন। প্রবল যুক্তিবাদী সুরেন্দ্রনাথ মিত্র তাঁকে দেখতে গিয়েছিলেন,তাকে সমালোচনা করার জন্যে|কিন্তু শেষপর্যন্ত তিনি শ্রীরামকৃষ্ণের একনিষ্ঠ ভক্তে পরিণত হন। তাঁর অননুকরণীয় ধর্মপ্রচারের ভঙ্গি অনেক সংশয়বাদী ব্যক্তির মনেও দৃঢ় প্রত্যয়ের উন্মেষ ঘটাতে সক্ষম হয়েছিল|

গুরু পূর্ণিমার এই পূর্ণ তিথিতে এই মহান গুরু ও সাধকের চরনে প্রনাম ও শ্রদ্ধা রইলো|পড়তে থাকুন|সঙ্গে থাকুন|যারা এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ভাগ্যবিচার বা শাস্ত্র মতে গ্রহ দোষ খণ্ডন করাতে চান তাদের জন্যে আগামী কাল গুরু পূর্ণিমার দিন আপনাদের মা হৃদয়েশ্বরী সর্বমঙ্গলা মন্দিরে বিশেষ হোম যজ্ঞ ও পুজোর আয়োজন হয়েছে|উল্লেখিত নাম্বারে ফোন করে কথা বলে নেবেন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|