শক্তি পীঠ – দেবী বহুলা
পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক
আজ আপনাদের একটি রহস্যময় শক্তি পীঠের কথা বলবো যা বাহুলা বা বহুলা নামে পরিচিত।
পীঠনির্ণয় তন্ত্রে এবং শিবচরিত গ্ৰন্থে এই পীঠের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
পীঠনির্ণয়তন্ত্র অনুসারে কেতুগ্রামে ভগবান বিষ্ণুর সুদর্শন চক্র দ্বারা খণ্ডিত খন্ডিত সতীর বাম বাহু পতিত হয়।সেই স্থানে দেবী বহুলা মন্দিরটি গড়ে ওঠে।কেতুগ্ৰামের ভিতরে অজয় নদীর তীরে অবস্থিত মায়ের ধামটি।এই পীঠে দেবীর ভৈরবের নাম ভীরুক বা ভূতনাথ।
রায়গুণাকর কবি ভারতচন্দ্র রায় অন্নদামঙ্গল কাব্যে লিখেছেন:
–“বহুলায় বামবাহু ফেলিল কেশব।বহুলা চন্ডিকা তায় ভীরুক ভৈরব।”
এককালে দেবী বহুলার নামেই ছিলো এই এলাকার নাম। পরে রাজা চন্দ্রকেতুর নাম অনুসারে হয় কেতুগ্রাম।
দেবী বহুলা চন্ডীরর এক রূপ এবং তিনি এই গ্রামের আরাধ্যা দেবী।এই কেতুগ্ৰামে অজয় নদের তীরে দেবীর প্রথম মন্দির কবে তৈরী হয় এবং কে তৈরী করেন তার কোনো সঠিক তথ্য পাওয়া যায়না তবে আধুনিক সময়ে নতুন করে দেবীমন্দির ও নাট মন্দির সংস্কার করা হয়েছে। নতুন মন্দিরে আছে কষ্টিপাথরে নির্মিত দেবী বহুলার প্রাচীন মূর্তিটি। এখানে দেবীর ডানপাশে অষ্টভুজ গনেশ। সম্ভবতঃ রাজা চন্দ্রকেতুই কার্তিক এবং গণেশসহ দেবীর পাথর মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
এই অষ্টভুজ গণেশ মূর্তি সারা ভারতে মোট চারটি মন্দিরে রয়েছে।দেবীর অন্য দিকে রয়েছেন তাঁর পুত্র কার্তিক। প্রতিদিন মাকে অন্নভোগ নিবেদন করা হয়।দেবীর মন্দিরের ঠিক পাশে রয়েছে একটি পুকুর। বহু ভক্তের বিশ্বাস, এই পুকুরে স্নান করলে পুন্য লাভ হয় এবং মনের বাসনা পূর্ণ হয়।
বহুলা কে বলা হয় যুগ্ম পীঠ কারন প্রায় পাশাপাশি রয়েছে আরো একটি শক্তি পীঠ। শাস্ত্র মতে এখানে দেবীর ডান কনুই পড়েছিল। এই স্থানটির অপর নাম রণখণ্ড। দেবীর নাম বহুলাক্ষী। এবং দেবীর ভৈরব হলেন মহাকাল শিব।
এই পীঠ সম্পর্কে বহু অলৌকিক ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায় অনেকের মতে এখানে নাকি রাত দুপুরে দেবীর নূপুরের শব্দ শোনা যায়। বহু তন্ত্রসাধকদের আগমন ঘটে এই সতীপীঠে। মূর্তি ছাড়াই মা’কে পুজো করা হয় কালিকা পুরাণে রচিত দেবীর বীজমন্ত্র সহ। বহু বছর ধরে এই যুগ্ম পীঠে আদ্যা শক্তি মহামায়া মা কালী এবং মা দুর্গা রূপেই পূজিতা হয়ে আসছেন।
ফিরে আসবো আগামী পর্বে।অন্য একটি
শক্তি পীঠের কথা নিয়ে। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।
