ভক্তের ভগবান – কৃষ্ণভক্ত সুদর্শন

17

ভক্তের ভগবান – কৃষ্ণভক্ত সুদর্শন

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

আমাদের সনাতন ধর্মের দেবদেবীদের প্রত্যেকের যেমন নিজস্ব বাহন রয়েছে, সৃষ্টি কার্যে বিশেষ ভূমিকা রয়েছে, তেমনই তাদের প্রত্যেকের নিজস্ব অস্ত্র রয়েছে, যেমন শিবের ত্রিশূল, ইন্দ্রের বজ্র, পরশুরামের কুঠার। তবে শ্রী কৃষ্ণের অস্ত্র সুদর্শন এদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।সুদর্শন একাধারে ভগবানের অস্ত্র আবার তার সর্বক্ষণের সঙ্গী এবং একই সাথে ভগবানের চরণ আশ্রিত পরম ভক্তও।

 

সুদর্শনের দুটি সত্ত্বা আছে একটিতে তিনি ভগবানের হাতের অস্ত্র। স্বয়ং শিব ভগবান বিষ্ণুকে সুদর্শন চক্র দিয়েছিলেন|সুদর্শন চক্র দানের প্রধান উদ্দেশ্য পালনকর্তা যেনো দৃঢ় হাতে সিস্টের পালন ও দুষ্টের দমন করতে পারেন|সু শব্দের অর্থ মঙ্গল এবং দর্শন মানে দেখা দেয়া অর্থাৎ সুদর্শন হলো মঙ্গলময় দর্শন এবং চক্র মানে যা নিজে থেকে ধাবিত হতে পারে|

 

সুদর্শন চক্রের সাথে জড়িয়ে আছে বিষ্ণুর আরেক অবতার পরশুরামের নাম , ত্রেতাযুগে সীতার স্বয়ংবর সভায় যখন রাম হরধনু ভঙ্গ করে ফেলেন তখন রুষ্ট হয়ে তাঁকে শাস্তি দিতে মহেন্দ্র পর্বত থেকে সেখানে উপস্থিত হন পরশুরাম।কিন্তু বিষ্ণুর আর এক অবতার রামের আসল প্রকৃতি জানতে পেরে তাঁকে সম্মান প্রদর্শন করেন তিনি। সেই সময় রাম তাঁকে সুদর্শন চক্রটি গচ্ছিত রাখতে অনুরোধ করেন। তিনি বলেন যে দ্বাপর যুগে তিনি যখন আবার জন্ম নেবেন, তখন যেন পরশুরাম সেটি ফিরিয়ে দেন। দ্বাপর যুদে শ্রীকৃষ্ণের রূপ ধরে বিষ্ণু ধরাধামে অবতীর্ণ হলে ধর্ম রক্ষা করার জন্য তাঁকে সুদর্শন চক্রটি ফিরিয়ে দেন পরশুরাম।

 

সুদর্শনচক্র তৈরি করেছিলেন স্বয়ং বিশ্বকর্মা, বৈষ্ণবরা বিশ্বাস করেন সুদর্শন চক্র ও বিষ্ণু এক এবং অভিন্ন|ভয়ংকর অসুররের কাছ থেকে সৃষ্টি কে রক্ষা করা হোক বা ক্রোধে উন্মত্ত মহাদেব কে শান্ত করতে সতীর দেহকে খণ্ডিত করা হোক সুদর্শন চক্র থাকে মুখ্য ভূমিকায়|প্রকৃত অর্থে সুদর্শন চক্র শুভ শক্তির প্রতীক যা অশুভ শক্তিকে বার বার পরাজিত করেছে|আমাদের জ্যোতিষ এবং বাস্তু শাস্ত্রে সুদর্শন যন্ত্রের উল্লেখ পাওয়া যায় যা সাক্ষাৎ সুদর্শন।বাস্তু দোষ এবং গ্রহ দোষ দুর করতে সুদর্শন যন্ত্র প্রয়োগ হয়।

 

সুদর্শন আবার একবার দেবতা রূপেও বর্ণিত হয়েছেন কিছু কিছু শাস্ত্রে।পুরান মতে সুদর্শন সূর্যদেব এবং সুদর্শনার পুত্র। ওঘবতী নামক এক রাজকন্যার সঙ্গে সুদর্শনের বিবাহ হয়।

 

সুদর্শনকে শ্রী কৃষ্ণ যেমন স্নেহ করতেন তেমনই শাসন ও করেন। একবার সুদর্শন যখন নিজের বল এবং পরাক্রমের জন্য অহংকারী হয়ে উঠেছিলেন তখন বিষ্ণু বজরংবলীকে ডেকে পাঠান এবং সুদর্শনকে বলেন দ্বার রক্ষী থাকতে এবং আদেশ দেন কাউকে যেনো তার অমুমতি ছাড়া অন্দর মহলে প্রবেশ করতে না দেয়া হয়। কিন্তু বজরংবলী অবলীলায় সুদর্শনকে পরাস্ত করে তার প্রভুর কাছে চলে যান।

 

ভক্ত এবং ভগবানের সম্পর্ক এরককমই হয়। শাসন এবং অনুশাসন দুই থাকে। তার সাথে থাকে স্নেহ এবং সঠিক পথ প্রদর্শন।

 

আবার ভক্তের ভগবানের পরবর্তী পর্ব নিয়ে যথা সময়ে ফিরে আসবো। পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।