ভক্তের ভগবান – মা সারদার কথা
পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক
মা সারদার কাছে এসে একবার এক গৃহী ভক্ত নাছোড়বান্দা, ‘তোমাকে বলতেই হবে তুমি আমার কেমন মা।’ শেষমেশ মা মুচকি হেসে বলেছিলেন, ‘আমি সত্যিকারের মা, পাতানো মা নই। ‘ বাস্তবে মা সারদা ছিলেন তার ভক্তদের কাছে সত্যি কারের মা। আজ এই পর্বে মা সারদা এবং তার ভক্তদের কিছু ঘটনা আপনাদের সামনে উপস্থিত করবো।
একবার জয়রামবাটি থেকে অনেকের সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর আসছেন।বেশ কিছুটা পিছিয়ে পড়েছিলেন মা। সন্ধে নামছে। চারদিক অন্ধকার হয়ে আসছে। ডাকাত মাঠ নাম কুখ্যাত এক মাঠের প্রান্তে এসে দাঁড়ান মা সারদা।কিছুক্ষনের মধ্যেই সামনে এসে দাঁড়ায় এক দুর্ধর্ষ ডাকাত।তার পরিচয় বুঝতে পেরেও মা সারদা বললেন বললেন, ‘বাবা আমি পথ ভুলেছি।তোমার জামাই দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে থাকেন। তুমি যদি সেখানে আমাকে পৌঁছে দাও তিনি তোমায় খুব আদর যত্ন করবেন।’ডাকাত তার স্ত্রীকে সাথে নিয়ে মা সারদাকে দক্ষিনেশ্বর পৌঁছে দিয়ে ছিলেন।পরে তারা মায়ের ভক্ত হয়ে ওঠেন। মা সারদা বাস্তবেই ছিলেন সতের ও মা অসতের ও মা।
স্বামী সারদানন্দের বন্ধু অভিনেতা পদ্মবিনোদ সারদা মায়ের ভক্ত ছিলেন। একদিন রাতে নেশার ঝোঁকে মায়ের বাড়ির চলে আসেন। মাও তাকে সাক্ষাৎ দেন। বাকি ভক্তরা রাগ করলে মা তাদের বলেন ছেলের ডাকে সাড়া না দিয়ে পারিনে। সে যেমন ছেলে হোক।’
মায়ের এক ভক্ত ছিলো আমজাদ কথা স্মরণ যাকে মা নিজের হাতে তাকে খেতে দিতেন এমনকী খাওয়া শেষে এঁটো থালা পরিষ্কার করতেও তাঁর কোনও দ্বিধা ছিল না। আমজাদের পরিচয় সম্পর্কে মাকে মনে করিয়ে দেওয়ায় তিনি বলেছিলেন, ‘আমার শরৎ যেমন ছেলে, ওই আমজাদও তেমন ছেলে’শরৎ অর্থাৎ স্বামী সারদানন্দ।
প্রতিটি মানুষকে নিজের মধ্যে দেবতাজ্ঞানে গ্রহণ করতেন। সাড়া দিয়েছেন সবার ডাকে, এমনকী পশুপাখিদেরও সন্তানস্নেহে আপ্লুত করেছেন। তার অলৌকিক সত্ত্বা ভক্তদের থেকে আড়ালে থাকতো।
এক বার এক সহজ সরল ভক্ত নিজেকে সংযত করে রাখতে না পেরে মাকে সরাসরি প্রশ্ন করলেন, মা, আপনি কি সাক্ষাৎ মা কালী? সারদা দেবী মৃদু হেসে বলেছিলেন – ওই, লোকে বলে কালী’!
ভক্তদের কাছে মা সারদা ছিলেন সাক্ষাৎ জগৎজননী। ঠাকুর রামকৃষ্ণর যদি অবতার হন তাহলে মা সারদা ছিলেন ভগবানের লীলা সঙ্গিনী।
মা সারদা কে প্রণাম জানিয়ে আজকের পর্ব এখানেই শেষ করছি।ফিরে আসবো ভক্ত এবং ভগবানের পরবর্তী পর্ব নিয়ে। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।