ভক্তের ভগবান – মহাপ্রভু এবং ভক্ত হরিদাস

46

ভক্তের ভগবান – মহাপ্রভু এবং ভক্ত হরিদাস

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

ভিন্ন ধর্মের সাথে সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও একজন সাধক শুধু ভক্তির মাধ্যমে কিভাবে কৃষ্ণকে পেতে পারেন তার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ ভক্ত হরিদাস।

 

ভক্ত হরিদাস বৈষ্ণব ধর্মের অন্যতম প্রচারক ছিলেন এবং মহাপ্রভুর সবথেকে প্রিয় শিষ্য হয়ে উঠেছিলেন।বাল্যকালে হরিদাস মুসলমানদের কাছে লালিত-পালিত হয়েছিলেন বলে তাকে যবন হরিদাস বলা হতো।

 

শ্রী চৈতন্য দেব যখন বৈষ্ণব ধর্ম প্রচার করছিলেন, সেই সময় কেঁড়াগাছি গ্রামের যবন হরিদাদের বড়ভাই সন্যাসী হয়ে চলে যান। যবন হরিদাস মায়ের গর্ভে থাকতে তার পিতাও সন্যাসী হয়ে অন্যত্র চলে যান এবং কিছু দিন পরে মৃত্যুবরণ করেন। এর পর এক মুসলিম দম্পতি হরিদাস কে সন্তান স্নেহে প্রতিপালন করতে থাকেন।

 

ক্রমে বয়স বাড়তে থাকলে হরিদাস সকল সময় হরিনাম জপ করতে শুরু করেন এবং একজন চৈতন্য ভক্ত হয়ে পড়েন। মুসলমান ঘরে হরিনাম জপ বন্ধ করার জন্য হাকিমপুরের প্রভাবশালী খাঁ সাহেবরা বিভিন্ন ভাবে চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। হরিদাস হাকিমপুর ছেড়ে যশোর জেলায় যান এবং কিছুদিন পরে তিনি শ্রী চৈতন্যদেবের শীষ্যত্ব গ্রহণ করেন এবং কয়েক মাসের মধ্যে হরিদাস শ্রী চৈতন্যের অন্যতম শীষ্য হন।

 

হরিদাস হরিনাম প্রচারে গৌরে থাকা কালীন গৌরের স্বাধীন সুলতান হোসেন শাহ সম্মানের সাথে গ্রহণ করেন।তিনি কোনদিন কোনও দেবদেবীর পুজা করেননি। হরিনাম জপ-ই ছিলো তার মূলমন্ত্র।

 

একবার কাগজপুকুরের জমিদার হরিদাসকে পরীক্ষা করার জন্য তার রক্ষিতা নর্তকী হীরামতিকে পাঠালেন। হীরামতি হরিদাসের ধ্যান ভঙ্গ করার জন্য রাতে কয়েক ঘন্টা নাচগান করে ক্লান্ত ও শ্রান্ত হয়ে মাটিয়ে লুটিয়ে পড়ে গেলো। অবশেষে স্বাভাবিক ভাবে হরিদাসের ধ্যান ভঙ্গ হলে তিনি রক্ষিতাকে উদ্দেশ্য করে বললেন- ‘মা তুই ছেলেকে দেখতে এসেছিস? মা ডাক শুনে সেই নর্তকী তার কাছে ক্ষমা চেয়ে সেই স্থান থেকে চলে যান।

 

শোনা যায় একবার হরিদাস ঠাকুরের নাম জপ বন্ধ করার জন্য এক দুষ্ট কাজী সাহেব তাকে বেত্রাঘাতের সাজা দেন। অসংখ্য বার বেতের আঘাত সহ্য করেও তার হরিনাম বন্ধ করা যায়নি। তিনি তিন লক্ষ বার হরে কৃষ্ণ মহা মন্ত্র জপ করেছিলেন।

 

প্রতিদিন তার গৃহে আসতেন মহাপ্রভু। দেহ ত্যাগের পর তার দেহ স্বয়ং মহাপ্রভু এবং তার পার্শদরা মিলে পুরীতে সমুদ্রের ধারে সমাহিত করেন এবং সেখানে গড়ে ওঠে হরিদাসের সমাধি মন্দির যেখানে আজও অখণ্ড হরিনাম হয়।

 

আবার এমনই এক ভক্তের ভক্তি এবং সেই সংক্রান্ত নানা ঘটনা নিয়ে ফিরে আসবো।

পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।