পুরানের দেবদেবী – অগ্নিদেব
পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক
ঋগ্বেদ অনুসারে মানুষ ও ভগবানের মধ্যে বার্তাবাহকের কাজ করেন অগ্নি। তিনি হলেন যজ্ঞের রাজা। অগ্নি ছাড়া কোনও ধর্মীয় কাজই সম্পূর্ণ হয় না।হোম যজ্ঞ সবেতেই অগ্নি অপরিহার্য।
আজকের পর্বে জানাবো অগ্নি দেবের মাহাত্ম।
হিন্দুধর্ম অনুসারে আগুন হলেন একজন দেবতা, অগ্নিদেব। ঋগবেদের প্রথম মন্ত্রেই আগুনের উপাসনা করা হয়েছে।ঋগবেদের প্রথম অধ্যায়ের ৯টি শ্লোক অগ্নির উদ্দেশ্যে নিবেদিত। ঋগবেদের সকল মণ্ডলেই আগুনের উপাসনা করা হয়েছে।
অগ্নিকে অগ্রণী অর্থাত্ প্রথম হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। হিন্দুধর্মে যে অষ্টবসু অর্থাত্ আট দেবতার কথা বলা আছে, তার মধ্যে প্রথম হলেন অগ্নি।
একবার অগ্নির প্ররোচনায় পুলোমা নামে এক রাক্ষস সন্ন্যাসী ভৃগুর স্ত্রীকে অপহরণ করে।
ভৃগুর অভিশাপে অগ্নি সর্বগ্রাসী হয়ে যায়।
অগ্নির অর্থ হল যা সর্বদা ঊর্ধ্বমুখী। আগুনের শিখা সব সময় উপর দিকে মুখ করে থাকে। হিন্দুধর্মে আগুনের বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে। আগুন সবকিছু পরিশুদ্ধ করতে পারে।আবার কেউ অন্যায় করলে তাকে শাস্তি দেওয়ার অধিকার রয়েছে অগ্নির। অগ্নিদেব তাই দণ্ডাধীশ নামেও পরিচিত। ঋগ্বেদ অনুসারে অগ্নির পিতা শক্তি। অনেক জায়গায় অবশ্য বলা হয়েছে যে তিনি ঈশ্বরের মুখ থেকে সৃষ্টি হয়েছেন। তাঁর স্ত্রী হলেন ঋষি কাশ্যপের কন্য়া স্বহা। তাঁর তিনি পুত্র- পাবক, পাবমান ও সূচী।
আগুন সব সময় উর্ধ্বগামী। সেই কারণে মৃতদেহ আগুনে দাহ করা হয় এবং যজ্ঞ হোক বা আরতি, কোনও শুভ কাজ আগুন ছাড়া সম্পূর্ণ হয় না। সারা বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে চার স্থানে অগ্নি বিদ্যমান। প্রথম আগুন হল সূর্য, যা আকাশে অবস্থিত। দ্বিতীয় আগুন হল বিদ্য়ুত্, যা মহাশূন্যে অবস্থিত। তৃতীয় আগুন হল সাধারণ আগুন, যা মর্ত্যে অবস্থিত। এবং চতুর্থ আগুন হল অগ্নুত্পাত, যা পাতালে অবস্থিত।
ব্যাবহারিক দিক দিয়ে আগুনের পাঁচটি রূপ সবথেকে বিখ্যাত। সেগুলি হলো যথাক্রমে
যজ্ঞাগ্নি: অর্থাত্ যজ্ঞের আগুন। এই আগুন ঈশ্বরের উপাসনা করে মানুষের কল্যানের জন্য ব্যবহার করা হয়।
ভোজাগ্নি: আগুনের এই রূপ ব্য়বহার করা হয় খাদ্য প্রস্তুত করতে হয়। অনেক বাড়িতে আগুনকে খাদ্য দেওয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাতে খাবারের প্রথম টুকরো আগুনে নিক্ষেপ করার রীতি প্রচলিত আছে।
জঠরাগ্নি: আগুনের এই রূপ মানুষকে কাজ করার জন্য উত্সাহ দেয়।
দেবাগ্নি: এই আগুন অশুভকে নাশ করে এবং কোনও কিছুর শুভ সূচনা করে। দাবানল বা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে যে আগুন লাগে, তাকে দেবাগ্নি বলা হয়। মহাভারতে বলা আছে অগ্নিদেবের একবার প্রচণ্ড বদহজম হয়ে গিয়েছিস। সেই জ্বালা তিনি শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জুনের সাহায্যে খাণ্ডব বন দহন করে নির্বাপিত করেন। খাণ্ডব দহনের পর সেই স্থানে ইন্দ্রপ্রস্থ নির্মাণ করে পাণ্ডবরা।
পঞ্চম রূপে আগুন মানব শরীরকে মৃত্যুর পর দাহ করে পঞ্চভূতে মিলিয়ে দেয়।
সব আগুনের উৎসই অগ্নি দেব স্বয়ং তার অধীনের থাকে আগুনের সর্বগ্রাসী ক্ষমতা।
পরবর্তী পর্বে পুরানের অন্য এক দেবতা বা দেবী কে নিয়ে আলোচনা করবো। পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।