কালী কথা – আনন্দময়ী কালীর পুজো
পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক
বাংলার রাজনীতি তথা আধ্যাত্মিক জগতে একটি অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র। বাংলার দূর্গা পুজো, কালী পুজো এবং জগদ্ধাত্রী পুজো সহ যেকোনো পুজোর প্রাচীন ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করলে মাঝে মাঝেই তার নাম উঠে আসে। আজ কে যে কালী মন্দিরটি নিয়ে লিখবো তা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এই মহারাজ কৃষ্ণ চন্দ্রের প্রপৌত্র গিরিশচন্দ্র রায় বাহাদুর।আনন্দময়ী কালী মন্দির নামেই কৃষ্ণনগরের এই মন্দির বিখ্যাত।
শোনা যায় রাজা গিরিশচন্দ্র রায় তন্ত্রসাধক ছিলেন।গিরিশচন্দ্র রাজা হওয়ার ২ বছর পর
১৮০৪ সালে মন্দিরটি স্থাপিত হয়েছিল।
মন্দিরে রাজা গিরিশচন্দ্র রায়ের নাম প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে খোদাই করা আছে। ছবিও আছে তাঁর।
জনশ্রুতি আছে দেবী আনন্দময়ীর ধ্যানরতা মূর্তিতে স্বপ্নে দর্শন দিয়ে নিজের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করতে বলেছিলেন রাজা গিরিশচন্দ্রকে। দেবী মূর্তিটি আজ যেখানে প্রতিষ্ঠিত সেখানেই নাকি পাওয়া গিয়েছিল প্রকাণ্ড একটি কষ্টিপাথর। যে পাথরে নির্মিত হয়েছে মহারাজের স্বপ্নে দেখা বিগ্রহ। শিলাখন্ড থেকে মূর্তি নির্মাণ করা হয় দুটি। একটি আনন্দময়ী কালী আর একটি
ভবতারিণী কালী।
চারদিক প্রাচীরে ঘেরা দক্ষিণমুখী আনন্দময়ী মন্দিরের গর্ভ গৃহে পঞ্চমুন্ডের আসনের উপর পাথরের বেদিতে হাঁটু মুড়ে যোগাসনে শুয়ে আছেন মহাদেব। শ্বেতপাথর নির্মিত বিগ্রহ। পূর্ব-পশ্চিমে শায়িত। মহাদেবের বুকের উপরে পদ্মাসনে বসে আছেন দেবী আনন্দময়ী। কষ্টিপাথরে নির্মিত নয়নাভিরাম বিগ্রহ উচ্চতায় সাড়ে ৩ ফুটের কাছাকাছি, দেবী চতুর্ভুজা। এই রূপেই দেবী রাজা মশাইকে স্বপ্নে দেখা দিয়ে ছিলেন।
মন্দির প্রাঙ্গনে রয়েছে অন্নপূর্ণা, গৌরাঙ্গদেবের মন্দির এছাড়াও রয়েছে শিব মন্দির এবং
গোপাল বিগ্রহ। সব মিলিয়ে মন্দির চত্বরে পদার্পন করলেই এক অদ্ভুত আধ্যাত্মিক শান্তি পাওয়া যায়।
বহু পূর্বে মা আনন্দময়ীর ছিলেন দিগম্বরী রূপে পরবর্তীকালে ভক্তদের অনুরোধে তাঁদের দেওয়া কাপড় মাকে পরানো হয়।দীপান্বিতা অমাবস্যা এখানে বেশ জাঁকজমক সহকারে পালন করা হয়।পুজোতে মাছ ভোগ দেয়া হয়। আগে বলিপ্রথা চালু ছিল তবে বর্তমানে তা বন্ধ আছে।
বাংলার এমন সব প্রাচীন কালী মন্দিরের ইতিহাস নিয়ে চলতে থাকবে কালী কথা। আবার যথা সময়ে ফিরে আসবো।
পরবর্তী পর্ব নিয়ে।পড়তে থাকুন।
ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।