বাংলার কালী – হাজার হাত কালীর পুজো

132

বাংলার কালী – হাজার হাত কালীর পুজো

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

বাংলার কালীতে কলকাতার এবং জেলার কয়েকটি প্রসিদ্ধ ও প্রাচীন কালী মন্দিরের কথা ইতিমধ্যে আপনাদের বলেছি।এই পরম্পরা কে আরেকটু এগিয়ে নিয়ে যাবো আজ|আজকের পর্বে হাওড়ায় অবস্থিত হাজার হাত কালীর মন্দির নিয়ে লিখবো।

 

বেশ কিছু শাস্ত্রে দেবীর এই রূপের উল্লেখ রয়েছে|

চণ্ডীপুরাণের বাইশ তম অধ্যায়ে কালীর এই রূপের কথা উল্লেখ আছে|চণ্ডীপুরাণ অনুযায়ী, অসুর বধের সময় দেবী দুর্গা অনেক রূপ ধারন করেছিলেন। তার মধ্যে অন্যতম হাজার হাতের রূপ। কাত্যায়নী, মহামায়ার পরেই অসুর নিধন করতে আসেন হাজার হাত রূপী মা কালী|দেবী কালীর এই রূপটি খুব একটা জনপ্রিয় বা পরিচিত রুপ নয়, এই রূপ খুব কম কালী মন্দিরেই রয়েছে, দেবীর এই বিশেষ রূপই দেখা যায় হাওড়ার শিব পুরের এই বিশেষ মন্দিরে|

 

মন্দিরের প্রতিষ্টা নিয়েও একটি লোককথা প্রচলিত আছে, শোনা যায় স্থানীয় মুখোপাধ্য়ায় বাড়ির ছেলে তান্ত্রিক আশুতোষ মুখোপাধ্য়ায় মা চণ্ডীর স্বপ্নাদেশে কালীর এই হাজার হাত রূপ দেখতে পান এবং মন্দির প্রতিষ্ঠা করে দেবীর এই রূপের পুজো করতে ব্যাকুল হয়ে ওঠেন|কিন্তু এই মন্দির নির্মাণের বিপুল ব্যয় ভার বহন করার সাধ্য ছিলোনা তান্ত্রিক আশুতোষ মুখোপাধ্যায় বা তার পরিবারের|তবে স্বয়ং দেবী যার সহায় তার আর চিন্তা কি! আশুতোষ মুখোপাধ্য়ায়ের এই ইচ্ছাপূরণের জন্য এগিয়ে আসেন স্থানীয় ধনী হালদার পরিবার এবং তাদের চেষ্টায় ১৮৭০ সালে স্থাপিত হয় এই মন্দির এবং দেবীর এই বিশেষ রূপ এখানে প্রতিষ্টিত হয়|

 

এই কালী মন্দির পশ্চিম বঙ্গ এবং হাওড়া ছাড়াও দক্ষিণ ভারতীয়দের মধ্যে বিশেষ ভাবে জনপ্রিয়, তার কারন জানতে হলে একটি অলৌকিক ঘটনা জানতে হবে।শোনা যায়, প্রায় ৬০ বছর আগে শ্রাবণ মাসের শুক্লপক্ষের এক শুক্রবার দক্ষিণ ভারতের বাসিন্দা এক দৃষ্টি হীন ব্যাক্তি এই মন্দিরে এসেছিলেন এবং তিনি হাজার হাত কালীর কাছে দৃষ্টি ফিরিয়ে দেওয়ার প্রার্থনা করেন|অলৌকিক ভাবে এক বছরের মধ্যে তিনি দৃষ্টিশক্তি ফিরে পান। তার পর থেকে তিনি মায়ের মাহাত্ম্য প্রচার শুরু করেন দক্ষিণ ভারত জুড়ে। এখন প্রচুর দক্ষিণ ভারতীয় মানুষ এই দেবীর কাছে নিজেদের মনোস্কামনা নিয়ে আসেন।শ্রাবণে শুক্লপক্ষের শুক্রবারে বহু ভক্ত পুজো হাওড়ার দেন এই

বিখ্যাত হাজার হাত কালীর মন্দিরে|

 

এই রূপে দেবী নীল বর্ণা, বাহন সিংহের উপর তাঁর ডান পা|এখানে দেবী পূজিত হন তন্ত্র মতে তবে বলী প্রথা এখানে নেই এবং প্রাচীন প্রথা মেনে আজ ও মুখোপাধ্যায় পরিবারের সদস্যরা এখানে পুজো করে আসছেন|দৈনন্দিন পুজোর পাশাপাশি বুদ্ধ পূর্ণিমা ও দীপাবলিতে এখানে বিশেষ পুজো হয় ও সেই উপলক্ষে ব্যাপক জনসমাগম হয়|

 

আজ এখানেই শেষ করছি।আবার ফিরবো পরবর্তী পর্বে। চৈত্র মাস উপলক্ষে শুরু করবো প্রাচীন এবং ঐতিহাসিক কিছু শিব মন্দির নিয়ে

ধারাবাহিক আলোচনা।পড়তে থাকুন।

ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।