কথিত আছে তিন শতাধিক বছর আগে অবধূত রামেশ্বর দন্ডি নামে এক মাতৃ সাধক অজয় নদের তীরে তার আরাধ্য দেবী লোবা মায়ের তন্ত্র মতে প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর কোনো এক সময় তিনি ওই লোবা গ্রাম ছেড়ে চলে যান। গ্রাম ছেড়ে যাওয়ার আগে তিনি যৌথ ভাবে পুজোর দায়িত্ব দিয়ে যান এলাকার ঘোষ পরিবারদের এবং চক্রবর্তী পরিবারের হাতে।
বর্তমানে বীরভূমে যতগুলো বড়ো কালীপুজো হয়ে থাকে তাদের মধ্যে অন্যতম হলো এই দুবরাজপুরের লোবা গ্রামের লোবা মা। প্রায় তিন শতাব্দী প্রাচীন এই কালীপুজোকে কেন্দ্র করে মানুষের উৎসাহ উদ্দীপনা থাকে চোখে পড়ার মতো।
দায়িত্ব প্রাপ্ত পরিবার গুলির পারিবারিক প্রভাব এবং প্রতিপত্তি কমে এলে স্থানীয় মানুষ জন স্বেচ্ছায় পুজো পরিচালনার ভার গ্রহণ করেন। শুরুর দিন থেকে প্রথা মেনে লোবা মায়ের মূর্তি তৈরি করার ক্ষেত্রে এলাকার বাগদী সম্প্রদায় মানুষদের আনা মাটি দিয়েই মায়ের প্রতিমা তৈরি করা হয়। এক্ষেত্রেও রয়েছে বিশেষত্ব। বিজয়া দশমীর দিন বর্ধমান জেলার গৌরবাজারের তালপুকুরের ঈশান কোণ থেকে আনা হয় মায়ের মূর্তি তৈরি করার জন্য পর্যাপ্ত মাটি। সেদিন থেকেই মূর্তি তৈরি করার কাজ করেন বাউরি বাগদী এবং সূত্রধর সম্প্রদায়ের মানুষেরা।
মায়ের মূর্তি রঙের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ভেষজ রং ব্যবহার করা হয়ে থাকে।কোনো রূপ রাসায়নিক প্রয়োগ করা হয়না।কালীপুজোর আগের দিন মায়ের গায়ে খড়ি দেওয়া হয়ে থাকে। পুজোর দিন রং করা থেকে সমস্ত কিছু হয়ে থাকে। আর রাতে চক্ষুদান করা হয়।রীতি মেনে প্রতিবছর দীপান্বিতা অমাবস্যার রাতে এই লোবা মায়ের পুজো হয় এবং ঠিক তার পরদিন মায়ের বিসর্জন হয়ে থাকে।
মায়ের অঙ্গরাগ থেকে পুজোর বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারিবারিক ভাগ রয়েছে। ঘোষ পরিবারের সদস্যরা মায়ের অলংকার পরান। প্রদীপের জন্য ঘি বংশপরম্পরায় সরবরাহ করে থাকেন গোয়ালা পরিবার।
আরো একটি বিষয় উল্লেখ করতেই হয়।
এখানে লোবা মায়ের আরও দুই বোন রয়েছে। পাশের দুই গ্রামে দুই বোনেরা পুজো হয়। প্রতি বছর বিসর্জনের সময়ে পাশের গ্রামের মেজো বোন এবং ছোট বোনকে আনা হয় লোবা মন্দির চত্বরে।
এই পুজো উপলক্ষে উৎসবে মেতে ওঠেন জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সমাজের সব শ্রেণীর মানুষ।সব মিলিয়ে সত্যি ব্যাতিক্রমী এবং ঐতিহ্যসম্পন্ন
পুজো এই বীরভূমের লোবা মায়ের পুজো।
ফিরে আসবো আগামী পর্বে। অন্য এক কালী মন্দিরের ইতিহাস নিয়ে। দেখতে থাকুন।