ফল হারিণী অমাবস্যা যত এগিয়ে আসছে ততই জমে উঠছে দেবী মাহাত্ম পর্ব গুলি। আমি নয় আপনাদের প্রতিক্রিয়া এবং উৎসাহ তাই বলছে।সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেই আজ এক অদ্ভুত এবং অলৌকিক ঘটনায় ভরপুর দেবী উপাখ্যান নিয়ে আমি আবার আপনাদের সামনে উপস্থিত।আজকের পর্বে শোনাবো ঘাগর বুড়ির অলৌকিক বৃত্তান্ত।প্রথমে একটু ভূমিকা করে নেয়া প্রয়োজন তাতে আপনাদেরই সুবিধা হবে বুঝতে।সে আজ প্রায় পাঁচশো বছর আগেকার কথা। আজকের আসানসোল মহানগর তখন ধূ ধূ করা মাঠ এবং আসান গাছের জঙ্গল এই আসান গাছ থেকেই পরবর্তীতে এলাকার নাম হয় আসানসোল।সেই সময়ে এই অঞ্চলে এক গরীব ব্রাহ্মণ কাঙালীচরণ চক্রবর্তী বাস করতেন।সামান্য কয়েকজন জজমানের বাড়িতে পুজো করে যা পেতেন তাই দিয়ে কোনো রকমে সংসার চলতো।আবার কোনো দিন অনাহারেও দিন কাটতোএকবার এক শীতের দিনে ক্ষুধা তৃষ্ণায় ক্লান্ত কাঙালীচরণ এক গাছতলার শীতল ছায়ার নীচে শুয়ে ছিলেন। দুর্ভাগ্য বসত সেদিন তার কিছুই জোটেনি। কাতর ভাবে ডাকতে লাগলেন মা চণ্ডীকে।তারপর কখন যেন ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। হঠাৎ চোখ খুলে গেলো এক শব্দে। দেখলেন সন্ধ্যে হয়েছে। দূর থেকে এক বৃদ্ধাকে লাঠি ঠুকে আসতে দেখলেন।জীর্ণ শির্ণ এক বৃদ্ধা কাঙালী চরণের সামনে এসে দাঁড়ালেন। তার দিকে তাকাতেই কাঙালীচরণের চোখ যেন ঝলসে গেল সারা শরীর দিয়ে যেন বিদ্যুৎ ঝলক বয়ে গেল। ক্রমশঃ যেনো তিনিঘুমের মধ্যেই গভীর ঘুমে তলিয়ে যেতে থাকলেন তবে তার অবচেতন মন পরিষ্কার শুনতে পেলেন – ‘তোর আর উঞ্চবৃত্তির দরকার নেই, তোর কোলেই দেখবি তিনটি ছোট পাথরের ঢিবি রেখে এসেছি। মাঝখানে আমি – মা ঘাগরবুড়ি, আমার বাঁয়ে মা অন্নপূর্ণা, ডাইনে পঞ্চানন মহাদেব। এইখানেই মন্দির প্রতিষ্ঠা কর, আর কোথাও যেতে হবে না।’পরবর্তীতে স্থানীয় রাজার পৃষ্ঠেপোষকতায় তৈরী হয় ঘাঘর বুড়ির মন্দির।দেবী ঘাঘর বুড়ি আদতে দেবী শ্রীশ্রী চন্ডী। এখানে তার কোন মূর্তি নেই।শুধু তিনটি শীলা দেবী রূপে পূজিতা হয়।দেবীর অদ্ভুত এই নামের দুটি ব্যাখ্যা হয়।প্রথমত ঘাঘর শব্দের অর্থ হল ঘুঙুর। পুরানে দেব-দেবীর বিভিন্ন পুজা পদ্ধতির উল্লেখ আছে- তার মধ্যে নৃত্য গীত-বাদ্য সহকারে বহু দেবীর পূজার প্রচলন ছিল সে ক্ষেত্রে ঘুঙুর ব্যাবহার হতোতাই হয়তো এই নাম অর্থ হল নদী। দ্বিতীয় ব্যাখ্যা অনুসারে ঘাঘর মানে নদী তীর বর্তী স্থান নুনীয়া নদীর দক্ষিন তীরে মায়ের মন্দির- এমনও হতে পারে- যে এই জন্যই দেবী চন্ডীর এখানে নাম হয়েছিল ” ঘাঘর বুড়ি”।দেবীর অনেক মহিমা শোনা যায় তার অগণিত ভক্তদের মধ্যে। দেবী অত্যান্ত জাগ্রত এবং তিনি তার ভক্ত দের খালি হাতে ফেরান না বলেই বিশ্বাস। প্রতিটি বিশেষ তিথিতে তার পুজো হয়ধুম ধাম করে। মেলা বসে। বহু মানুষের মিলন ক্ষেত্রে পরিণত হয় এই পবিত্র স্থান।ফিরে আসবো পরের পর্বে। ফল হারিণী অমাবস্যা পর্যন্ত চলতে থাকবে দেবী মাহাত্ম নিয়ে আলোচনা। থাকবে মন্দির রহস্য নিয়ে পর্ব। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।