বর্গী হামলার সময় মারাঠারা যখন বর্ধমান আক্রমণ করেন। তখন সেখানকার জমিদাররা চলে আসেন কালনাতে। এখানেই তারা নতুন করে প্রাসাদ ও বিভিন্ন মন্দির নির্মাণ করেন। তাদের তৈরি রাজবাড়ির অন্দরে রয়েছে বিখ্যাত লালজী মন্দির। যে মন্দিরের সঙ্গে জড়িয়ে পুরনো দিনের বহু ইতিহাস।সেই মন্দির নিয়েই আজকের লিখবো আজকের পর্বে|শতাব্দী প্রাচীন লালজী মন্দির কালনায় বর্ধমান রাজাদের তৈরি মন্দিরগুলির মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন মন্দির এবং এই মন্দির তৈরীর পেছনে রয়েছে এক অদ্ভুত রোমাঞ্চকর কাহিনী।প্রাচীনকালে সন্ন্যাসীরা পুণ্য অর্জনের জন্য কালনার ওপর দিয়ে নদীপথে পাড়ি দিত গঙ্গাসাগরে। তখন যাওয়ার পথে কিছু সন্ন্যাসীর দল কালনার এই গঙ্গার ঘাটে আস্তানা গড়ে। একদিন গঙ্গাস্নানে যাওয়ার পথে রাজমাতা ব্রজকিশােরী দেবী এমনি এক তাবু থেকে হঠাৎ এক বালকের কণ্ঠস্বর শুনতে পেলেন। কৌতূহল বশত তাঁবুতে প্রবেশ করলে তিনি এক সন্ন্যাসীকে দেখতে পেলেন। বালকের প্রসঙ্গ সন্ন্যাসীকে জিজ্ঞেস করায়, তিনি জানালেন তার সঙ্গে রয়েছে শুধুমাত্র তার উপাস্য দেবতা কানাইয়ের মূর্তি। এই শুনে ব্রজকিশােরী দেবী সেই মূর্তি নিতে চাইলেন। কিন্তু রাজমাতার অনুরোধেও মূর্তি দিতে চাইলেন না সেই সন্নাসী। তখন রাজমাতা জানালেন তার মেয়ের সাথে কানাইয়ের বিয়ে দিতে ইচ্ছুক। সন্ন্যাসী এ কথায় রাজি হলে ব্রজকিশােরী দেবী তার আরাধ্যা রাধারাণীর বিগ্রহের সঙ্গে বিয়ে দিলেন সন্ন্যাসী লালজীর সেই কানাই বিগ্রহের । এরপর ব্রজকিশােরী দেবী বহু অর্থ ব্যায় করে বিগ্রহদুটিকে প্রতিষ্ঠা করেন এবং গড়ে তােলেন লালজী মন্দির।প্রসিদ্ধ এই মন্দিরের মােট ২৫ টি চূড়া বা রত্ন যা ৪টি ধাপে বিভক্ত হয়েছে। মন্দিরের প্রথম তলার ছাদের চারকোণে মােট ১২ টি চূড়া রয়েছে। তার উপরের ধাপে ৮ টি চূড়া ও তৃতীয় তলার ছাদে ৪ টি চূড়া এবং সবশেষে একদম উপরে ১ টি চূড়া রয়েছে। মন্দিরের ভিতরে প্রবেশের জন্য পূর্বদিকে রয়েছে একটি কাঠের দরজা। এই দরজা দিয়েই গর্ভগৃহে প্রবেশের পরেই ডানদিকে রয়েছে সিঁড়ি, যার সাহায্যে মন্দিরের উপরে ওঠা যায়। লালজি মন্দিরের দেওয়ালের সর্বত্রই রয়েছে টেরাকোটার কাজ সমগ্র মন্দির পরিসরে রয়েছে অসাধারণ টেরাকোটার কারুকার্য|বারান্দার দেওয়ালে খোদাই করা রয়েছে লঙ্কাযুদ্ধ। এছাড়াও বারান্দার সামনের খিলানে রয়েছে স্বপরিবাসে দুর্গা, দক্ষিণা কালী, বালগােপাল, জগদ্ধাত্রী দেবী। রয়েছে অশ্বারােহী সৈন্য, উঠের পিঠে সামরিক বাহিনী, মল্লযুদ্ধ, শিকারযাত্রা।মন্দিরের বিগ্রহ রাধাকৃষ্ণের দুই পাশে রয়েছে বালগােপাল। আজও নিয়মিত এই মন্দিরে পুজো করা হয়। এখানকার প্রধান উৎসব জন্মাষ্টমী। এছাড়াও এখানে মহাসমারোহে রাসযাত্রাও পালিত হয়।ফিরবো পরের পর্বে|থাকবে অন্য কোনো মন্দিরের রহস্য নিয়ে আলোচনা|পড়তে থাকুন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|