আজ আপনাদের উত্তরাখন্ডের দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থিত কার্তিক স্বামী মন্দিরের কথা জানাবো|পুরাণ অনুসারে, যে পর্বতের উপর কার্তিক স্বামী টেম্পল তৈরি করা হয়েছে সেই পর্বতের আগে নাম ছিল ক্রোঞ্চ পর্বত। ক্রোঞ্চ পর্বতেই রয়েছে কার্তিকদেবের অস্থি!পুরাণ অনুসারে, মহাদেব এবং দেবী পার্বতীয় জ্যেষ্ঠ পুত্র কার্তিকদেব।দক্ষিণভারতে কার্তিকদেবকে স্কন্দ এবং মুরুগান নামে পুজো করা হয়।দুর্গম অঞ্চলে অবস্থিত এই মন্দিরের সঠিক বয়স বা নির্মাণের ইতিহাস জানা যায়না।বর্তমানে উত্তরাখন্ড সরকার এই মন্দিরের রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বে আছে|জিম করবেট এর বইয়ে আপনারা হয়তো রূদ্র প্রয়াগের কথা পড়েছেন সেই রুদ্রপ্রয়াগ থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরত্বে রয়েছে এই মন্দির। পর্বতের এই চূড়ায় পৌঁছতে হলে কনকচৌরি থেকে ভক্তদের ৩ কিলোমিটার ট্রেক করে আসতে হবে। ট্রেক-এর পথ সহজ নয়, তবে নিঃসন্দেহে আনন্দদায়ক এবং মনমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ|কথিত আছে, জ্যেষ্ঠ পুত্র কার্তিক নাকি কনিষ্ঠপুত্র গণেশ— কে বেশি তার বাবা-মা’কে ভালোবাসেন তা পরীক্ষা করার জন্য একবার পিতা মহাদেব এবং মাতা পার্বতী ছোট্ট একটি পরীক্ষা নিয়েছিলেন। তাঁরা সন্তানদের জানিয়েছিলেন, যে পুত্র আগে ব্রহ্মাণ্ড প্রদক্ষিণ করে আগে তাঁদের কাছে পৌঁছতে পারবে, সেই পুত্রই তাঁদের বেশি ভালোবাসে বলে প্রমাণিত হবে। শোনা মাত্রা কার্তিকদেব তাঁর ময়ূরের পিঠে চড়ে ব্রহ্মাণ্ড প্রদক্ষিণে বেরিয়ে পড়েন। অন্যদিকে গণেশদেব তাঁর পিতা মাতাকে প্রদক্ষিণ করে জোড় হস্তে বলেন, তাঁর কাছে পিতা-মাতাই ব্রহ্মাণ্ডের স্বরূপ! একথা শুনে পিতা মহাদেব ও মাতা পার্বতী অত্যন্ত প্রসন্ন হন।পুরান কথায় আগেও হয়তো আপনাদের এই পৌরাণিক ঘটনা বলেছি আজ তার পরের ঘটনা বলবো যার সম্পর্ক রয়েছে এই মন্দিরের সাথে|কিছু সময়ের মধ্যে কার্তিকদেবও ব্রহ্মাণ্ড প্রদক্ষিণ করে এসে ফিরে আসেন ও দেখেন পিতা-মাতার ক্রোড় অধিকার করে বসে আছেন গণেশ। এরপর গণেশদেবের বুদ্ধির পরিচয় পেয়ে ও পিতা মাতার সিদ্ধান্ত জেনে তিনি পিতা মহাদেব ও মাতা পার্বতীর প্রতি ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠেন। তাঁর মনে হয়, পিতা-মাতা কনিষ্ঠ পুত্রের প্রতি বেশিই স্নেহশীল। তিনি রাগের তেজ শান্ত করতে ক্রোঞ্চ পর্বতের চূড়ায় বসে কঠোর তপস্যা শুরু করেন দেহের মাংস ও হাড় পরিত্যাগ করেন ও পিতামাতার প্রতি তাঁর ভক্তির পরিচয় দেন। ওই তেজদীপ্ত স্থানেই পরবর্তীকালে তৈরি হয় মন্দির।তার অস্থি সেই থেকে সংরক্ষিত আছে এই পর্বতে এমনটাই প্রচলিত বিশ্বাস|অনেকেই বর্তমানে এই দুর্গম পাবর্ত্য অঞ্চলে ঘুরতে যান । পর্বতের চূড়ায় পৌঁছে কার্তিক স্বামীমন্দিরে ভক্তি ভরে মাথা ঠেকিয়েও আসেন।পরের পর্বে অন্য কোনো মন্দির রহস্য নিয়ে যথা সময়ে ফিরে আসবো|পড়তে থাকুন|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|