চলছে শ্রাবন মাস, অর্থাৎ শিবের মাস, জ্যোতিষ শাস্ত্রের সাথে গভীর সম্পর্ক রয়েছে পবিত্র শ্রাবন মাসের এবং দেবাদিদেব মহাদেবের|আজ শুরুতে সেই বিষয়ে একটু আলোকপাত করবো কারন আজকের শিব ভূমি ত্রম্বকেশ্বর|আমি নিজে ব্যাক্তিগত ভাবে এই মহান তীর্থক্ষেত্র দর্শন করছি এবং এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করছি, সেই প্রসঙ্গে পরে আসছি জ্যোতিষ শাস্ত্রের একটি তাৎপর্য পূর্ণ বিষয় নিয়ে একটু বলে নিই|শ্রবনা নক্ষত্র থেকেই এই মাসের নামকরন যা জ্যোতিষ শাস্ত্রের অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ এক নক্ষর আবার,জ্যোতিষ শাস্ত্র মতে লগ্ন কুন্ডলি তে যে কয়েকটি অশুভ গ্রহগত সংযোগ থাকে তার মধ্যে অন্যতম কাল স্বর্প দোষ|মোট বারো প্রকারের কাল স্বর্প দোষ থাকে যার সব গুলোই একেকটা সাপের নামে আর এই কাল সর্প দোষ খণ্ডনের সর্ব শ্রেষ্ঠ স্থান মহারাষ্ট্রে অবস্থিত ত্রম্বকেশ্বর মন্দির যা দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্তর্গত|কেনো এই স্থানে কালসর্প দোষ খণ্ডিত হয় তার পেছনে আছে এক পৌরাণিক ঘটনা|
পুরান মতে একবার গণেশ মহাদেবের পুজো করেন সেই সময়ে শিবের গলায় থাকা বাসুকি নাগের মনে হয় যে গণেশ তারই পুজো করছেন। তার এই ঔদ্ধত্যের জন্য শিব রেগে গিয়ে তাকে অভিশাপ দেন যে নাগকূল তাদের সব ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে।তাই হয়|পরবর্তীতে ক্ষমতা হারিয়ে ফেলা নাগেরা শিবের কাছে গিয়ে অভিশাপ ফিরিয়ে নেওয়ার আবেদন জানায়। শিব তখন দয়া বসত তাদের মর্ত্যে গিয়ে তাঁর পুজো করতে বলেন|নাগকুল এই ত্রম্বকেশ্বর মন্দিরে শিব পূজা করে তাদের হারানো গৌরব ফিরে পায়|সেই থেকে এই মন্দিরের নিষ্ঠা সহকারে প্রথা মেনে পূজাপাঠের মাধ্যমে কাল স্বর্প দোষ খণ্ডনের প্রথা চলে আসছে|
অবশ্য আরেকটি পৌরাণিক আখ্যান মতে রাহু ও কেতুও এই স্থানে মহাদেবের পুজো করেছিলেন|তাই এই শিব মন্দির রাহু ও কেতু দ্বারা সৃষ্ট কালসর্প দোষ খন্ডনের শ্রেষ্ঠ স্থান বলে বিবেচিত হয়|
ত্রম্বকেশ্বর মন্দিরের প্রাচীন ইতিহাস নিয়ে যত দূর জানা যায়,বর্তমান মন্দির টি নির্মাণ করিয়েছিলেন পেশোয়া তৃতীয় বালাজি বাজি রাও,1755 থেকে 1786 দীর্ঘ একত্রিশ বছর লেগেছিলো এই মন্দির নির্মাণ সম্পুর্ন হতে|ত্র্যম্বকেশ্বর মন্দিরের পিছনের পাহাড় ব্রহ্মগিরি থেকে উদ্ভূত হয়ে গোদাবরী গুপ্ত ভাবে পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে এসে ক্ষীণ আকারে বেরিয়ে আসছে জ্যোতির্লিঙ্গ ত্র্যম্বকেশ্বরের মধ্য থেকে। মন্দির থেকে কিছু দূরে কুশাবর্ত কুণ্ড ও গোমতী ঘাট। কুম্ভপর্বে যে তিনটি স্নান হয়, তার একটি রামতীর্থ রামঘাটে ও অপর দুটি হয় এই কুশাবর্ত তীর্থে। আমার নিজের অভিজ্ঞতা এবার বলি, 2019 সালের মাঝামাঝি গেছিলাম এই মন্দিরে,উদ্দেশ্য ছিলো কিছু ক্লাইন্টের কাল সর্প দোষ খণ্ডন ও অবশ্যই জ্যোতিরলিঙ্গ দর্শন|তবে পেয়েছিলাম অনেক বেশি কারন হটাৎ সেদিন ওই স্থানে শঙ্করাচার্যর আগমন ঘটে ছিলো|তার দিব্য দর্শন লাভ করে ধন্য হয়েছিলাম|এছাড়াও গোদাবরী কুন্ডে স্নান করার পর যে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি লাভ করেছিলাম তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না|মধুর সেই স্মৃতি আজীবন আমার সাথে থাকবে|অন্য কোনো শিব ভূমি নিয়ে আবার ফিরে আসবো যথা সময়ে পড়তে থাকুন|জ্যোতিষ বিষয়ে কথা বলতে অথবা সমস্যা নিয়ে আসতে চাইলে যোগাযোগ করুন উল্লেখিত নাম্বারে|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|