বাংলার জমিদার বাড়ির দূর্গা পুজো : লাহা বাড়ির পুজো

539

ঢাকে কাঠি পড়তে আর বেশি দেরি নেই|আইনি জটিলতা থাকবে, থাকবে স্বাস্থ সংক্রান্ত বিধি নিষেধ ও থাকবে এবং সবের মাঝেই অনুষ্ঠিত হবে বাঙালির প্রধান উৎসব|অবশ্যই সব নিয়ম কানুন
মেনে|আপনারা হয়তো জানেন আমার গৃহ মন্দিরে মা হৃদয়েস্বরী সর্ব মঙ্গলার পাশাপাশি প্রতি বছরই দেবী দুর্গাও পূজিতা হন নিষ্ঠা সহকারে|এবছরও হবে|পুজোর ব্যস্ততা এখন তুঙ্গে|পুজোর তোড়জোড় ও পুজো পক্রিয়া পুরোটাই আপনারা দেখতে পাবেন যথা সময়ে|পাশাপাশি প্রতিদিন জ্যোতিষ পরামর্শ ও চলছে অনলাইনে|এতো কিছুর মাঝেই আমি একটি নতুন বনেদি বাড়ির পুজোর কথা নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির|আজ লাহা বাড়ির পুজো|

কলকাতার বড়ো পারিবারিক পুজো গুলির মধ্যে এই পুজো অন্যতম|মনে করা হয় বর্ধমানের বড়শূলে প্রথম পুজো শুরু করেন বনমালী লাহা|পরবর্তীতে কলকাতায় এই পুজো শুরু করেন দুর্গাচরণ লাহা|এ বাড়ির পুজোর এমন কিছু বৈশিষ্ট আছে যা আর বেশ অদ্ভুত এবং আর কথাও চোখে পড়েনা|লাহা বাড়ির কুল দেবতা সিংহ বাহিনী এবং দূর্গা পুজোর সময়ের দেবী দূর্গা সিংহ বাহিনী একই সাথে পূজিতা হন|সিংহ বাহিনী কি করে এবাড়ির কুলদেবী হলো সে নিয়েও একটি অলৌকিক ঘটনা আছে|

শোনা যায় কোনো এক সময় নাকি দেবীর এই মূর্তি কোন এক গভীর জঙ্গলে ডাকাতদের হাতে লাঞ্ছিত হয়ে অনাদরে অযত্নে পড়ে ছিল এই বাড়িরই এক সদস্য দেবীর কাছে স্বপ্নাদেশ মেয়ে মূর্তি উদ্ধার করতে গিয়ে দেখেন, দেবী বড় বিপন্ন। তিনি যত্নে দেবীকে তুলে নিয়ে এসে কুলদেবী রূপে পুজো করতে শুরু করেন|সেই থেকেই অষ্ট ধাতুর সেই মূর্তি কুল দেবী রূপে এবাড়িতে প্রতিষ্ঠিত|

মনে করা হয় ওই ঘটনার পর থেকে লাহাদের ব্যাপক উন্নত হয়|পরবর্তীতে শিবচরণ লাহা ইংরেজদের সঙ্গে পেন খাতাপত্র এবং মূল্যবান রত্নের ব্যবসা করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করেছিলেন। পুজোর জাঁকজমকও বাড়ে এই সময়|এই বাড়ির পুজো হয়ে ওঠে কলকাতার বনেদি বাড়ির বড়ো পুজোগুলোর একটা|

এ বাড়িতে দেবী দুর্গার রূপ অন্য|তিনি এখানে হরপার্বতী রূপের পূজিতা হন|লাহা বাড়ির পুজো হয় বৈষ্ণব মতে।শিবের কোলে দেবী দুর্গা উপবিষ্টা|মহিষাসুর থাকেনা, দেবীর হাতে কোনো অস্ত্রও থাকেনা|লাহাবাড়ির পুজোর রীতিও একটু আলাদা লাহাবাড়িতে কাঠামো পুজো হয় জন্মাষ্টমীর দুই তিন পড়ে এবং দেবীপক্ষের শুরুতে বোধন হয়|প্রথা মেনে এখানে অন্ন ভোগ হয় না এখানে ভোগের বিশেষত্ব নানা ধরণের মিষ্টি|এখনো বলী প্রথা পুরো পুরি লুপ্ত হয়নি তবে প্রাণী হত্যা হয়না|বলী হয় কুমড়ো বা শসা|বিসর্জন ঘিরেও এবাড়িতে রয়েছে এক অদ্ভুত প্রথা বিসর্জন দিয়ে ফিরে বাড়ির পুরুষরা জিজ্ঞাসা করেন, ‘মা আছেন ঘরে’ ? তখন বাড়ির কোনও মহিলা ভিতর থেকে উত্তর দেন, ‘হ্যাঁ মা আছেন।‘ বাইরে থেকে ফের জিজ্ঞাসা করা হয় ‘মা আছেন ঘরে ?’ একই উত্তর দেওয়া হয় ভিতর থেকে। এভাবে পরপর তিনবার জিজ্ঞাসা করার পর সবাই ভেতরে প্রবেশ করে|

আজ এখানেই শেষ করছি|জ্যোতিষ পরামর্শ বা মন্দির সংক্রান্ত তথ্য পেতে ফোন করতে পারেন উল্লেখিত নাম্বারে|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ|