পুরান রহস্য – শনিদেবের এতো ক্রোধ কেনো?

1115

আমাদের পুরান ও জ্যোতিষ শাস্ত্রে গ্রহ রাজ শনিকে একটি ভয়ানক গ্রহ বা রাগী দেবতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে|সাধারণ মানুষের মধ্যে এতটাই আতঙ্ক রয়েছে তার উপস্থিতিকে কেন্দ্র করে যে তার মুখে আনতে বা সরাসরি তার দর্শন করতেও ভয় পান অনেকেই|জ্যোতিষ শাস্ত্র মতে তার কুদৃষ্টি বা কু প্রভাব ছারখার করে দিতে পারে একজন জাতক বা জাতিকার জীবনে|শনিদেব বদরাগী, তিনি নিষ্ঠুর! কিন্তু কেনো?কি তার রাগের কারন? সত্যি কি তিনি এতটা ভয়ের? এতটা হানিকারক!এই সব প্রশ্নের উত্তর রয়েছে আমাদের শাস্ত্রে|উত্তর পেতে গেলে জানতে গেলে জানতে হবে শনিদেবের শৈশব কিভাবে কেটেছিলো, কি ঘটে ছিলো তার সাথে! আজ জানাবো|দেখতে থাকুন|

বিভিন্ন হিন্দু পুরাণে শনির কাহিনি সম্পর্কে ভিন্ন মতবাদ রয়েছে।হাজার বদনাম সত্ত্বেও মৎস্য পুরাণ কিন্তু শনিদেবকে লোকহিতকর গ্রহের তালিকাতেই ফেলেছে। মৎস্য পুরাণে বলা হচ্ছে, দেবশিল্পী বিশ্বকর্মার মেয়ে সঞ্জনার সঙ্গে বিয়ে হয় সূর্যদেবের। কিন্তু সূর্যের প্রচণ্ড তাপে প্রায় ঝলসে যান সঞ্জনা। তখন তাঁর নতুন নাম হয় সন্ধ্যা। নিজের এমন দূরবস্থায় স্বামীর প্রতি সমস্ত ভালোবাসা হারিয়ে ফেলেন তিনি। সূর্যের থেকে দূরে পালাতে চান তিনি। কিন্তু কী ভাবে? তখন সন্ধ্যা নিজেরই একটি প্রতিকৃতি সৃষ্টি করেন| তাঁর নাম দেন ছায়া। ছায়াকে স্বামীর দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে সন্ধ্যা পিতার ঘরে ফিরে যান। এ ভাবে যে তাঁর স্ত্রী বদল হয়ে গেল তা খেয়ালই করেন না সূর্যদেব।

এই সূরদেব ও ছায়ার সন্তান হিসেবে জন্ম নেন শনি। মেয়ে তাঁর কাছে, এদিকে সূর্যের সন্তান-জন্মের খবর পেয়ে বিশ্বকর্মা ধন্দে পড়ে যান। সন্ধ্যার কাছে ছুটে গিয়ে সব জানতে চান। সব শুনে বিশ্বকর্মা সন্ধ্যাকে সেই মুহূর্তেই পতিগৃহে ফিরে যেতে নির্দেশ দেন। ক্ষুব্ধ সন্ধ্যা ফিরে গিয়ে ছায়াকে নিঃশেষ করে নিজে ফের সূর্যের স্ত্রীর ভূমিকা পালন করতে থাকেন। এ ঘটনাও সূর্যের নজর এড়িয়ে যায়|

শনির জীবনের দুক্ষ দুর্দশার সূত্রপাত এখান থেকেই, এর পর শনির প্রতি বিমাতৃসুলভ আচরণ করতে শুরু করেন সন্ধ্যা। শনিকে সূর্যের থেকে দূরে সরাতে অনবরত স্বামীর কান ভাঙাতে থাকেন সন্ধ্যা। এভাবে মায়ের স্নেহ এবং বাবার ভালোবাসা না পেয়ে ক্রুদ্ধ, বিরক্ত, অলস হয়ে উঠতে থাকেন শনি। কোনও কিছুই তাঁর ভালো লাগে না।

কিছুকাল পরে, সূর্যের ঔরসে সন্ধ্যার গর্ভে একটি ছেলে ও একটি মেয়ের জন্ম হয়। ছেলের নাম রাখা হয় যম ও মেয়ের নাম যমুনা। ক্রমে ছেলে-মেয়েরা বড় হলে তাঁদের দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন সূর্য। যমকে দেওয়া হয় ধর্মরাজের দায়িত্ব। পৃথিবীর বুকে ধর্মরক্ষার দায়িত্ব তাঁর। যমুনা পবিত্র নদীর রূপ নিয়ে সব পাপ-তাপ ধুয়ে দেওয়ার দায়িত্ব পান।

ওদিকে সন্ধ্যার ক্রমাগত কান ভাঙানোর ফলে বড় ছেলে হওয়া সত্ত্বেও শনিকে কোনও দায়িত্বই দেন না সূর্য। এ ভাবে বঞ্চিত, অসহায় শনি ভাই-বোনের থেকে দূরে সরে গিয়ে আরও ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠেন। একদিন শোক ও রাগে পাগল হয়ে সন্ধ্যাকে লাথি মারেন তিনি। সেই রাগে শনিকে খোঁড়া হয়ে যাওয়ার অভিশাপ দেন সন্ধ্যা। মা-কে লাথি মারার জন্য শনির ওপর সূর্য ক্রুদ্ধ হলেও বেশি অবাক হন সন্ধ্যার ভূমিকায়। একজন মা কী করে তাঁর সন্তানকে এমন অভিশাপ দিতে পারেন! সন্ধ্যার কাছে সব কথা জানতে চান তিনি। সূর্যের জেরায় ভেঙে পড়ে অবশেষে তাঁকে সব জানাতে বাধ্য হন সন্ধ্যা।

অবশেষে শনির ওপর এতদিন এত অন্যায় হয়েছে বুঝতে পেরে নিজের ভুল স্বীকার করেন সূর্য। শনিকে সৌরমণ্ডলে স্থান দেন তিনি। কর্মফলের দেবতা হিসেবে শনিকে উন্নীত করা হয়। এ জন্যই কেউ কোনও অপকর্ম করলে শনির নজর এড়ায় না এবং শনির হাতে তার শাস্তি নিশ্চিত।অর্থাৎ তার এই ক্রোধ ও নিষ্ঠুরতা দিয়ে তাকে বিচার করলে হবেনা|তিনি কর্ম ফল প্রদান করেন|তিনি ভালোর জন্যে ভালো আবার খারাপের জন্যে খারাপ|মানুষের জীবনে তার প্রভাব দুরকমেরই হয়|তার দশায় একজন রাজাও হতে পারে আবার ক্ষতির সম্মুখীন ও হতে পারে|আশার কথা হলো তার ক্রোধ উপশম করে তাকে তুষ্ট করারও অসংখ্য পন্থা রয়েছে যা অনুসরণ করে প্রতিদিন উপকৃত হচ্ছেন বহু মানুষ|

শনিকে ভয় পাবেন না, আস্থা রাখুন নিজের সৎ কর্মের প্রতি, ভরসা রাখুন জ্যোতিষ শাস্ত্রে|আর জ্যোতিষ সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে আমার সাথে কথা বলতে চাইলে আমার নাম্বারে যোগাযোগ করতে পারেন, বর্তমানে অনলাইনে আমি ভাগ্যবিচার ও প্রতিকারের ব্যবস্থা করছি|ভালো থাকুন|ধন্যবাদ