আমাদের সনাতন ধর্মে বিদ্যার দেবী বলা হয় দেবী সরস্বতীকে তাই বিশেষ করে বিদ্যার্থীদের কাছে দেবী সরস্বতী পূজনীয় তবে হিন্দু দের কাছেই তিনি পরম শ্রদ্ধার এবং পূজনীয়। তাঁর আশির্বাদে শুধুমাত্র বিদ্যা নয় বুদ্ধিও বৃদ্ধি পায়, বৃদ্ধি পায় সৃজন শীল ক্ষমতা ও সমৃদ্ধি|আজ সেই বহু প্রতীক্ষিত সরস্বতী পুজো, আসুন আজ জেনে নিই দেবী সরস্বতী সম্পর্কে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পৌরাণিক তথ্য, সহজ সরল ভাবে|
পুরান মতে সৃষ্টির একদম আদি লগ্নে ধ্যানে বসেন সৃষ্টি কর্তা ব্রহ্মদেব সেই ধ্যানে তিনি তাঁর সকল ভালো গুণকে একত্র করতে থাকেন। আর ব্রহ্মার সকল ভালো গুণ একত্রিত হয়ে তা ধীরে ধীরে এক নারীর আকার নিতে থাকে।এবং সেই নারী পরবর্তীতে আবির্ভুতা হন দেবী সরস্বতী রূপে,এবং
এই ভাবেই ধ্যান মগ্ন ব্রহ্মার মুখ গহ্বর থেকে সৃষ্টি হয় দেবী সরস্বতীর|জন্মের পর সরস্বতী তাঁকে এই বিশ্বকে কী ভাবে আরও সুন্দর করে তোলা যায়, সে সম্পর্কে পরামর্শ দেন ও ব্রহ্মা দেবী সরস্বতীর উপর দায়িত্ব দেন বিশ্বের সৌন্দর্য রক্ষা ও সমস্ত সৃজন শীল কাজের|
সরস্বতী শব্দের দুই অর্থ – একটি ত্রিলোক্য ব্যাপিনী সূর্যাগ্নি, অন্যটি নদী, শব্দের অর্থ অনুসারে সর শব্দের অর্থ জল অর্থাৎ যাতে জল আছে তাই সরস্বতী|
দেবী সরস্বতী কে নিয়ে কয়েকটি বিষয় আরো জানা দরকার, অনেকেই প্রশ্ন করেন রাজহংস কেন সরস্বতীর বাহন? এর কারন জলে, স্থলে, অন্তরীক্ষে সর্বত্রই হাঁসের সমান গতি, ঠিক যেমন জ্ঞানময় পরমাত্মা সর্বব্যাপী ও সর্বত্র বিরাজমান অর্থাৎ পরম জ্ঞানের প্রতিক এই রাজ হংস|
আবার হংসের রয়েছে এক অদ্ভুত ক্ষমতা, হংস জল ও দুধের পার্থক্য করতে সক্ষম। জল ও দুধ একত্রে মিশ্রিত থাকলে হাঁস শুধু সারবস্তু দুগ্ধ বা ক্ষীরটুকুই গ্রহণ করে, জল পড়ে থাকে। জগতে জ্ঞান থাকবে অজ্ঞানতাও থাকবে, শিক্ষা থাকবে অশিক্ষাও থাকবে, সংস্কার থাকবে কু সংস্কার ও থাকবে, তবে আমাদের সচেতন ভাবে হংসের ন্যায় ভালো টা নিতে হবে আর খারাপ টা বর্জন করতে হবে এটা বোঝাতেই সরস্বতীর বাহন হিসেবে হংসকে নির্বাচিত করা হয়েছে|
সরস্বতী পুজোর আগে কেনো কুল খেতে নেই, বিশেষত বিদ্যার্থীদের তার উত্তর ও রয়েছে পুরানে,
পুরাণ মতে, দেবী সরস্বতীকে তুষ্ট করতে একদিন বদ্রিকাশ্রমে তপস্যা করার সিদ্ধান্ত নেন মহামুনি ব্যাসদেব। তপস্যা শুরুর আগেই দেবী সরস্বতী ব্যাসদেবকে একটি শর্ত দেন তাঁকে। একটি কুল বীজ রেখে তিনি বলেন, এই বীজ থেকে গাছ হয়ে কুল হবে। সেই কুল যেদিন ব্যাসদেবের মাথায় পড়বে সেদিন দেবী সন্তুষ্ট হবেন ব্যাসদেবের তপস্যা সম্পূর্ণ হবে।
শর্ত মেনে নিয়ে তপস্যা শুরু করেন ব্যাসদেব। দীর্ঘ সময় কেটে গেলো সেই বীজ থেকে গাছ হল, গাছে কুল ধরল এবং কুল পেকে তা ব্যাসদেবের মাথাতেও পড়ল। ঘটনাচক্রে সেই দিনটা ছিল পঞ্চমী, এরপর সরস্বতীর অর্চনায় কুল ফল নিবেদন করেন ব্যাসদেব । সেই থেকেই বিদ্যার দেবীর প্রসাদ হিসেবেই মরসুমের প্রথম কুল খাই আমরা। এবং দেবীর পুজোর আগে কারোর কুল খাওয়া উচিত নয় বিশেষ করে ছাত্র ছাত্রীদের কারন সরস্বতীর কৃপা তাদের সবথেকে বেশি প্রয়োজন|
আগামী কাল দেখুন আমার টিভির লাইভ অনুষ্ঠান সেখানে পুজোর উপাচার নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলবো, সরস্বতী পূজা করুন ভক্তি ভরে, আর যেকোনো গ্রহগত সমস্যার সমাধানের জন্যে যোগাযোগ করুন আমার উল্লেখিত নাম্বারে|ভালো থাকুন সবাইকে সরস্বতী পূজার শুভেচ্ছা|ধন্যবাদ