পাথুরিয়াঘাটা জমিদার বাড়ির দূর্গা পুজো

89

পাথুরিয়াঘাটা জমিদার বাড়ির দূর্গা পুজো

 

পন্ডিতজি ভৃগুশ্রী জাতক

 

এই ধারাবাহিক লেখনীরা শুরু দিকে বেশ কয়েকটি কলকাতার বনেদি বাড়ির পুজো নিয়ে লিখেছিলাম।তবে কিছু দূর্গাপুজো নিয়ে না লিখলে বনেদি বাড়ির পুজোর কথা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।

কলকাতার পাথুরিয়াঘাটার রাজবাড়ির পুজো তার মধ্যে অন্যতম।

 

নবাবী আমলে বর্ধমান থেকে ব্যবসা সূত্রে কলকাতায় এসে পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটে বাড়ি তৈরি করেন রামরাম ঘোষ। পলাশীর যুদ্ধের কয়েক বছর পরে তৈরি হয় পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটের বাড়িটি। পাথুরিয়াঘাটা ঘোষ বংশের প্রতিষ্ঠাতা রামরামের ছেলে রামলোচন ঘোষ ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানির সাথেও ব্যবসা করেছেন পরে তিনি কোম্পানির দেওয়ান নিযুক্ত হন ।রামলোচনের তিন পুত্র শিবনারায়ণ, দেবনারায়ণ এবং আনন্দনারায়ণ।রামলোচনের মেজো ছেলে দেবনারায়ণের ছেলে খেলাৎচন্দ্র ঘোষ উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি পুরনো বাড়ির পাশেই দুর্গাদালানসহ নতুন বাড়ি তৈরি করে উঠে যান এবং সেখানে দুর্গাপুজো শুরু করেন আজও সেই পুজো খেলাৎ ঘোষের পুজো নামে জনপ্রিয়।

 

এই বাড়ির দূর্গা পুজোতে আসতেন সস্ত্রীক ওয়ারেন হেস্টিংস পরবর্তীতে ঘোষ বাড়ির পুজোতে এসেছেন শ্রীরামকৃষ্ণ এবং গান্ধীজির মতো ব্যাক্তিত্বরা।খেলাৎ ঘোষের ছেলে রামনাথ ঘোষ যখন বাড়ির কর্তা তখন কথা সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায় পুজোর সময় এই বাড়িতে আসতেন।কালীপ্রসন্ন সিংহ মানে হুতোম প্যাঁচার লেখায় প্রায়ই উঠে আসত বাবু খেলাত চন্দ্র ঘোষের বৈভবের কথা। ঘোষ বাড়ির বিখ্যাত দুর্গাপুজোর কথা।

 

পুজো হয় শাস্ত্র মতে এবং বেশ নিষ্ঠার সাথে। এবাড়িতে আশ্বিনের কৃষ্ণপ্রতিপদে দেবীর বোধন শুরু হয়। তার আগে মধুসূদন ও রামকৃষ্ণ দেবের পুজো করা হয়।পুজোর প্রতিদিনই কুমারী পুজো হয়।সপ্তমীর দিন কলাবউ স্নান হয়।অষ্টমীর দিন হাজার একটা পদ্ম নিবেদন করা হয় দেবীকে।ঘোষ বাড়ির পুজোতে পশু বলি নিষিদ্ধ তার বদলে এখানে বলি দেওয়া হয় চিনির মঠ যা বিশেষ ভাবে কাশী থেকে বানিয়ে আনা হয়।শোনা যায় অতীতে সাতবার বন্দুক দেগে প্রতিমা ঘাটের দিকে নিয়ে যাওয়া হত কালের নিয়মে কিছু রীতি নীতিতে পরিবর্তন আনতে হয়েছে তবে আজও আন্তরিকতা এবং নিষ্ঠা একই রকম আছে।

 

ফিরে আসবো অন্য কোনো ঐতিহাসিক বনেদি বাড়ির পুজো নিয়ে আগামী পর্বে। চলবে এই ধারাবাহিক আলোচনা। পড়তে থাকুন।ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।